মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনীতে গবাদিপশুর শরীরে দেখা দিয়েছে লাম্পিং স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)’র। গত এক মাসে ৫টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে কয়েক হাজার গরু। অ্যানথ্রাক্সের পর এবার হঠাৎ করে গরু লাম্পিং স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে দেয়া ‘গোটপক্স’ ভ্যাকসিন কোন কাজে আসছে না বলে দাবি করেছেন খামারিরা। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের দিকে ব্যাপকহারে লাম্পিং স্কিন ডিজিজ দেখা দেয়। চলতি বছরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকদের রোগ প্রতিরোধে ‘গোটপক্স’ ভ্যাকসিন দেবার জন্য বলা হয়েছে।
স্থানীয় চিকিৎসকরা স্বীকার করেছেন, এই ভ্যাকসিনে রোগ প্রতিরোধে কাজ হচ্ছে না। এ রোগে বড় গরুর তুলনায় বাছুর গরু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় খামার ও কৃষক পর্যায়ে ১ লাখ ৮৭ হাজার গরু রয়েছে।
গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের খলিলুর রহমান জানান, তার পাঁচটি গরুর মধ্যে একটি গরু ল্যাম্পিং স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত। প্রথমে গরুর শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে সারা শরীরের গুটি গুটি বের হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
সাহারবাটি গ্রামের বাদশাহ জানান, তার বাড়ির একটি বড় এড়ে গরু দশ দিন যাবত আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এতে তার লক্ষাধিক টাকা লোকসান হয়েছে।
গাংনীর উত্তর পাড়ার জামেনা খাতুনের একটি বাছুর গরু আক্রান্ত হয়েছে। তিনি এসেছেন গাংনী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চিকিৎসকের কাছে।
তিনি জানান, সরকারিভাবে কোনো ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। শুধু ব্যবস্থাপত্র লিখে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। পাশেই ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে আনতে হয়েছে। তারপরও কবে নাগাদ গরু সুস্থ হবে তা বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
চৌগাছা গ্রামের আজাদ আলী জানান, তার একটি গাভী গরু তিন দিন আগে আক্রান্ত হয়েছে। তার দুধ পান করে বকনা বাছুরটির সারা শরীর ফুলে গেছে। তার বাড়িতে ১১টি গরু রয়েছে। আক্রান্ত গরুগুলোকে আলাদা করে মশামাছি থেকে নিরাপদ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সোমবার গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, লাম্পিং স্কিন ডিজিজ অন্তত ১৩টি গরুকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। হাসপাতালে প্রতিদিন শতাধিক গরুকে গোটপক্স ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ। তবে কোনো পরামর্শই কাজে আসছে না বলে জানান গরুর মালিকরা।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আরিফুল ইসলাম জানান, গাংনীতে আস্তে আস্তে মহামারি পর্যায় ধারণ করেছে ল্যাম্পিং স্কিন ডিজিজ। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। কোনো গরু আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য গরুর থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। আক্রান্ত গরুকে অবশ্যই মশারি আবৃত করে রাখতে হবে। তা না হলে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।
তিনি আরো জানান, একটি উপজেলায় মাত্র একজন চিকিৎসক। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
ভোরের আকাশ/জেএস/