ঢাকা: গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেছেন, আবাসন খাতের উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সোমবার (০৩ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব বসতি দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে আরো বিপুল সংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতা, পুঁজিবাদী সভ্যতা এবং সম্পদের অসম বন্টন সমাজে প্রতিনিয়ত বৈষম্য বৃদ্ধি করছে। এতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি এবং বাসস্থান সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার মত ঘটনা বিশ্বে নতুন করে উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ফলে আবাসন ব্যবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ আবির্ভূত হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য চাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। বলেছিলেন পূর্ত প্রতিমন্ত্রী।
সীমিত সম্পদ সত্বেও দেশের আবাসন খাতে সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগাতি উপজেলায় আশ্রয়হীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন শুরু করেন। রাজধানী ঢাকার বাউনিয়াবাদে তিনি বাস্তহারাদের বাসস্থানের জন্য ভূমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা নিহত হবার পর এই কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর তিনি সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
নিজ মন্ত্রণালয়ের বিভিন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় স্বল্প, মাধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিপুল সংখ্যক প্লট উন্নয়ন ও ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। রাজধানী ঢাকায় বস্তিবাসীদের জন্য ৫৩৩টি ভাড়া ভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। টঙ্গীর দত্তপাড়া এবং ঢাকার মিরপুরে এ ধরনের আরও বড় দুটি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কে পিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে ১৩ হাজার ৭২০টি ফ্ল্যাট। সরকারি কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য ঢাকার মতিঝিল, আজিমপুর, মালিবাগ, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসন ২০০৮ সালে বিদ্যমান ৮ শতাংশ থেকে এ পর্যন্ত ২৬ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমি রক্ষা পাবে অন্যদিকে সবার মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য : বিশ্বব্যাপী সকলের মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং এ ব্যাপারে সর্বস্তরে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৬ সাল থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার জাতিসংঘ ভুক্ত সকল দেশ বিশ্ব বসতি দিবস পালন করে আসছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গীকার করি, সবার জন্য টেকসই নগর গড়ি”।
গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রধানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রতিমন্ত্রী বিশ্ব বসতি দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।
ভোরের আকাশ/এনআইআর/জেএস/