logo
আপডেট : ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৫৭
জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের জয়ের হার কমছে
আ.লীগের ২৪, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র ৮, জাপার ১ প্রার্থীর জয়
শাহীন রহমান

আ.লীগের ২৪, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র ৮, জাপার ১ প্রার্থীর জয়

ঢাকা: দেশের ৩৩ জেলায় অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ২৪টিতে। এ পদে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৮ জেলায়। একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

 

সোমবার অনুষ্ঠিত চেয়ারম্যান পদের ফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয় ৭৩ শতাংশ। অন্যদিকে এবার বিদ্রোহীদের জয় ২৭ শতাংশ। এছাড়া বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে আগেই বিজয়ী হয়েছেন ২৬ জন। এর আগে ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেও অন্য দল অংশ না নেয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের।

 

রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ২১ জেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই জয় পান। এর বাইরে ৩৮ জেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে ২৫ জেলায় আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। বাকি ১৩ জেলায় জয় পান দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা। প্রথম দফায় ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় ছিল ৬৫ শতাংশের কিছু বেশি। ওই বছর বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পান ৩৪ শতাংশের কিছু বেশি জেলায়। দুই বছরের তুলনামূলক হিসাবে এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান কিছুটা কমেছে।

 


সোমবার সারা দেশে ৫৭ জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৩টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়েছে। ৬১ জেলায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষলা করা হলেও আদালতের আদেশে ২ জেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি। দুই জেলায় সব পদে একক প্রার্থী থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল ৫৭ জেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ করা হয় ৩৩ জেলায়। বাকি জেলায় সদস্যপদে ভোট নেয়া হয়।

 

ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিদের বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ইসির থেকে সব ভোটকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি। এ নির্বাচনে ভোটাররা সবাই শিক্ষিত-ভদ্র হওয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ইভিএমে ভোট হলেও একজনের ভোট অন্যজনকে দিতে দেখা যায়নি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪৬২ কেন্দ্রের ৯২৫ বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯২, সাধারণ সদস্যপদে ১ হাজার ৪৮৪, মহিলা সদস্য পদে ৬০৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ভোটার ছিল ৬০ হাজার ৮৬৬ জন। জেলা পরিষদ আইনানুযায়ী, স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই শুধু এ নির্বাচনে ভোটার। তবে জানা গেছে, ৩৩ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হলেও সব জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা অংশ নেন। এছাড়া অনেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেন। তবে বিএনপিসহ দেশে বড় রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি।

 

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী যারা : রাজশাহীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, রাজবাড়ীতে একেএম শফিকুল মোরশেদ আরুজ, খুলনায় শেখ হারুনুর রশীদ, মানিকগঞ্জে অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন, গাইবান্ধায় আবু বকর সিদ্দিক, যশোরে সাইফুজ্জামান পিকুল, নড়াইলে অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, ময়মনসিংহে অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, নেত্রকোনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট অসিত কুমার সরকার সজল, সাতক্ষীরায় আলহাজ নজরুল ইসলাম, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, গাজীপুরে মো. মোতাহার হোসেন, জয়পুরহাটে খাজা সামছুল আলম, কিশোরগঞ্জে অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, চুয়াডাঙ্গায় মাহফুজুর রহমান মনজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আল মামুন সরকার, নীলফামারীতে অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, মেহেরপুরে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, হবিগঞ্জে ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, বগুড়ায় ডা. মকবুল হোসেন, ঝিনাইদহে ড. হারুন অর রশীদ, চট্টগ্রামে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, কুষ্টিয়ায় মো. সদর উদ্দিন খান এবং মাগুরায় পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

 


বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী যারা : ফরিদপুরে শাহাদাত হোসেন, নরসিংদীতে ইশরাত উদ্দিন আহমেদ মনির, পঞ্চগড়ে আব্দুল হান্নান শেখ, পটুয়াখালীতে অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, সুনামগঞ্জে নুরুল হুদা মুকুট, চাঁদপুরে আলহাজ ওচমান গণি পাটওয়ারী, রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু এবং কক্সবাজারে শাহিনুল হক মার্শাল চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

 

জাতীয় পার্টির বিজয়ী প্রার্থী যারা : দিনাজপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী মো. দেলওয়ার হোসেন চেয়ারমান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ১৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো. তৈয়ব উদ্দীন চৌধুরী মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ২২৬ ভোট এবং জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আজিজুল ইমাম চৌধুরী চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৭৮ ভোট।

 

ইসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১ জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন করা হয়। তিনটি পার্বত্য জেলায় কোনো জেলা পরিষদ না থাকায় ৬১ জেলায় নির্বাচন হয়। এ বছর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আগেই ২৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সরকারদলীয় সব প্রার্থী। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, পিরোজপুর, ফেনী, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেটে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ২টি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী) জেলায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৩৩ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা