logo
আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:০১
বিচারকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা হচ্ছে ৭ বছর পর
* হালনাগাদ তালিকা না থাকায় প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা
এম বদি-উজ-জামান

বিচারকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা হচ্ছে ৭ বছর পর

ঢাকা: সাত বছর পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে একটি খসড়া তালিকাও তৈরি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। খসড়ায় ১ হাজার ৯২৫ বিচারকের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশে জ্যেষ্ঠতার তালিকা হালনাগাদ করার এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হালনাগাদ জ্যেষ্ঠতার তালিকা না থাকার সুযোগে বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই এ উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এজন্য দেশের অধস্তন আদালতের সব বিচারকের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানীর স্বাক্ষরে গত রোববার এ নোটিশ জারি করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ তালিকা করার ক্ষেত্রে কী কী তথ্য দিতে হবে, তার একটি ছকও সংশ্লিষ্ট বিচারকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। জন্মতারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরিতে যোগদানের তারিখ ও পদ, কোন মাধ্যমে নিয়োগ {বিসিএস(বিচার)/বিজেএস}, পদোন্নতির তারিখ, মেধাক্রম (পিএসসি/বিজেএস/সরকার কর্তৃক প্রকাশিত) এবং পরিচিতি নম্বর চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে ‘[চাকুরিতে যোগদানের বছর বিসিএস (বিচার)/বিজেএস কোডঃব্যাচ নম্বর পিএসসি/বিজেএস/সরকার কর্তৃক প্রকাশিত মেধাক্রম এখানে বিসিএস (বিচার) কোড-১, বিজেএস কোড-২, বিশেষ নিয়োগ কোড-০ হিসেবে গণ্য করা হবে।’ এ মডেল অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং সহকারী জজ- এ ৫ ক্যাটাগরিতে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

 

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যে খসড়া তালিকা তৈরি করেছে, তাতে কোনো বিচারকের আপত্তি আছে কিনা, থাকলে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যসংবলিত আপত্তি দাখিল করতে বলা হয়েছে। কোনো আপত্তি থাকলে তা নিষ্পত্তির পরই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের এ তালিকা করার বিষয়ে জারি করা নোটিশে বলা হয়, ‘এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ২০১৫ সালের পর হতে অদ্যাবধি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা সংশোধন বা পুনঃপ্রণয়ন করা হয়নি। ফলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের ওপর অত্র কোর্ট কর্তৃক তত্ত্বাবধানমূলক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বাছাই কমিটি ও ফুলকোর্ট সভা কর্তৃক বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের পদোন্নতির প্যানেল প্রণয়ন, জিএ কমিটি কর্তৃক পদায়নের পরামর্শ প্রদান, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় হালনাগাদ জ্যেষ্ঠতার তালিকার অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।’

 

নোটিশে আরো বলা হয়, ‘বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সমস্ত প্রশাসনিক কাজে কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিতকরণের জন্য ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্রেডেশন নম্বর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই গ্রেডেশন নম্বর সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। কারণ প্রতি বছরই কিছুসংখ্যক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা অবসরে যান আবার বিভিন্ন কারণে অনেক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতা লঙ্খিত হতে পারে। এতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের গ্রেডেশন নম্বর পরিবর্তিত হয়। ফলে কেবল গ্রেডেশন নম্বরের ওপর ভিত্তি করে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের পরিচয় নিশ্চিতকরণ সুবিধাজনক নয়।’

 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সরকারী কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করা দেশের অন্য সার্ভিসের সদস্যদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ‘পরিচিতি নম্বর চালু করা হয়েছে। ফলে যেকোনো প্রশাসনিক বিষয়ে সহজে ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে। তাই প্রজাতন্ত্রের অন্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মতো বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদেরও একটি পরিচিতি নম্বর চালুর প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হচ্ছে।’