logo
আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:৩৭
শুধু করোনায় মৃত্যু ২৬.১৯, সহরোগে ৭৪ শতাংশ
নিখিল মানখিন

শুধু করোনায় মৃত্যু ২৬.১৯, সহরোগে ৭৪ শতাংশ

করোনায় মৃত্যুর তালিকায় বিভিন্ন সহরোগে (কো-মরবিডিটি) আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। সহরোগে মারা যাওয়া করোনা রোগীর হার ৭৩.৮১ এবং শুধু করোনায় মারা যান ২৬.১৯ শতাংশ। গত তিন মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আর করোনায় যারা মারা গেছেন তাদের সহরোগের মধ্যে গত দুবছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস।

 


বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। হাসপাতালে যাওয়া এবং নমুনা পরীক্ষার প্রতি উদাসীনতার কারণে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ পাচ্ছে না। অনেক করোনা রোগীর মৃত্যুর দায় অনেক সময় বিভিন্ন সহরোগের ওপর গিয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় সরকারি পরিসংখ্যানের অনেকগুণ বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত এবং মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। মৃত করোনা রোগীদের সহরোগ হিসেবে অনেক রোগ যুক্ত থাকা এবং নমুনা পরীক্ষার বাইরে থাকার কারণেও মৃত্যুর দায় থেকে মুক্ত থাকছে করোনাভাইরাস। অথচ প্রতিদিন উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিজনিত রোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, থাইরয়েডজনিত রোগ, নিউরোলজিক্যাল রোগ ও গ্যাস্ট্রোলিভারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেক রোগীর করোনা টেস্ট করা হচ্ছে না।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক বুলেটিন অনুযায়ী, দেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া রোগীদের সহরোগ হিসেবে অনেক জটিল রোগের নাম উঠে এসেছে। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিজনিত রোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, থাইরয়েডজনিত রোগ, নিউরোলজিক্যাল রোগ ও গ্যাস্ট্রোলিভারজনিত রোগ।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত তিন মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত ২৩৩ জনের মধ্যে ১৭২ জনের সহরোগ (কো-মরবিডিটি) ছিল। এই হার ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

 

৪১তম সপ্তাহে মারা যাওয়া ২০ করোনা রোগীর মধ্যে ১৬ জনের সহরোগ ছিল। অর্থাৎ ৮০ শতাংশের সহরোগ ছিল। ৪০তম সপ্তাহে মারা যাওয়া ১২ করোনা রোগীর মধ্যে ৮ জনের সহরোগ ছিল। অর্থাৎ ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশের সহরোগ ছিল।

 

এভাবে করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩৯তম সপ্তাহে ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশের, ৩৮তম সপ্তাহে ৭১ দশমিক ৪, ৩৭তম সপ্তাহে ৮০, ৩৬তম সপ্তাহে ১০০, ৩৪তম সপ্তাহে ৮৫ দশমিক ৭, ৩২তম সপ্তাহে ৬৬ দশমিক ৭, ৩১তম সপ্তাহে ৬৯ দশমিক ২, ৩০তম সপ্তাহে ৬৮, ২৯তম সপ্তাহে ৬৮ দশমিক ৮, ২৮তম সপ্তাহে ৮২ দশমিক ৪ এবং ২৭তম সপ্তাহে ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের বিভিন্ন সহরোগ ছিল।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ-২০২২ অনুযায়ী সর্বশেষ ৪১তম সপ্তাহে (৩ থেকে ১০ অক্টোবর) করোনায় যারা মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে সহরোগের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ ছিল ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ, ডায়াবেটিস ৩১ দশমিক ৩, বক্ষব্যাধি ১২ দশমিক ৫, কিডনিজনিত রোগ ১৮ দশমিক ৮, হৃদরোগ ৩১ দশমিক ৩, ক্যান্সার ১২ দশমিক ৫, স্ট্রোক ১২ দশমিক ৫, নিউরোলজিক্যাল রোগ ৬ দশমিক ৩ এবং রক্তজনিত রোগ ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

 

এভাবে ৪০তম স্থানে উচ্চরক্তচাপ ৭৫ শতাংশ, ডায়াবেটিস ৩৭ দশমিক ৫, বক্ষব্যাধি ২৫, কিডনিজনিত রোগী ২৫, স্ট্রোক ২৫ এবং ক্যান্সার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।

 

আর ৩৯তম সপ্তাহে (২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর) ডায়াবেটিস ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ, উচ্চ রক্তচাপ ৬৩, বক্ষব্যাধি ২৭ দশমিক ৩, স্ট্রোক ১৮ দশমিক ২, থাইরয়েডজনিত রোগ ৯ দশমিক ২ ও ক্যান্সার ১৮ দশমিক ২ শতাংশ।

 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারির ভয়াবহতার কথা ভুলে গেছে দেশের মানুষ। ৯৫ শতাংশ করোনা রোগী হাসপাতালে যাচ্ছে না। দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা তিন থেকে ৫ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করছে গত চার মাস ধরে। অর্থাৎ করোনা টেস্ট করানোর ক্ষেত্রেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন উপসর্গহীন করোনা রোগীরা। করোনা শনাক্ত হওয়ার আগেই ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিজনিত রোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, থাইরয়েডজনিত রোগ, নিউরোলজিক্যাল রোগ ও গ্যাস্ট্রোলিভারজনিত রোগে দেশে অনেক রোগীর মৃত্যু ঘটছে। অথচ করোনা রোগীদের মৃত্যুর পেছনে সহরোগ হিসেবে উপর্যুক্ত রোগের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, সহরোগ নিয়ে মারা যাওয়া করোনা রোগীর সংখ্যাই বেশি। তাই করোনার উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিতেই হবে। বিশেষ করে দেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া রোগীদের সহরোগ হিসেবে অনেক জটিল রোগের নাম উঠে এসেছে। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিজনিত রোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, থাইরয়েডজনিত রোগ, নিউরোলজিক্যাল রোগ ও গ্যাস্ট্রোলিভারজনিত রোগ। তাই করোনা নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। ন্যূনতম মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

ভোরের আকাশ/আসা