logo
আপডেট : ২৩ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:২১
বাস ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা থামছেই না
সন্ধ্যার পর ছাত্রত্ব যায় কোথায়!
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

সন্ধ্যার পর ছাত্রত্ব যায় কোথায়!

তারা দিনে ১৩ ঘণ্টার জন্য ছাত্র। সময়কাল সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এটা বিআরটিসির জন্য। মালিকানাধীন গাড়িতে সময় আরেক ঘণ্টা কম। কিন্তু বাস্তবে এ সময় আরো কম। সূর্য ডুবে কোনোরকম সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই তাদের ছাত্রত্ব আর থাকে না। কাগজে-কলমে তারা পড়ে যান বাতিলের খাতায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও থাকে না তাদের ছাত্রত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির সময়ও নিজেদের ছাত্র দাবি করতে পারেন না তারা। ছাত্রের দাবিতে দিতে পারেন না হাফ ভাড়া। এ নিয়ে বাসের হেলপার-কন্ডাক্টর ও ছাত্রদের মধ্যে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। কখনো তা হাতাহাতি পর্যন্ত রূপান্তর হয়। এটা রাজধানীর প্রতিদিনের চিত্র। ভুক্তভোগীদের দাবি, নির্দিষ্ট কোনো সময় বা ঘণ্টাব্যাপী নয়, ছাত্রজীবনের সময়কালজুড়ে তারা হাফ ভাড়ার সুবিধা চান।

 

তার নাম নাফিস ইকবাল। একসময় বাংলাদেশ দলের ওপেনার ছিলেন নাফিস ইকবাল নামে এক ক্রিকেটার। এ নাফিসের জন্ম সেই সময়। মা-বাবা আদর করে ছেলের নাম রেখেছিলেন নাফিস। সময়ের পরিক্রমায় নাফিস এখন বড় হয়েছেন। পড়ছেন রাজধানীর একটি স্বনামধন্য কলেজে। নাফিসের বিলাসবহুল জীবন নয়। গ্রাম থেকে এসেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করে নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করেন নাফিস ইকবাল। প্রতিদিন যেতে হয় শাহবাগ থেকে শ্যামলী। কিন্তু সন্ধ্যার পর আর হাফ ভাড়া দিতে পারেন না তিনি। কার্ড শো করলেও মানতে চান কন্ডাক্টররা। বেশিরভাগ সময় তর্কে জড়ান না নাফিস। বাধ্য হয়েই দিতে হয় ফুল ভাড়া। জানতে চাইলে নাফিস বলেন, দিনের একটা সময় পর্যন্ত হাফ ভাড়া থাকবে তার পর থাকবে নাÑ এটা হতে পারে না। আমরা যারা ছাত্র, তারা সবসময় হাফ ভাড়া সুবিধা চাই। ছুটির দিনে আমাদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ এদিন হাফ ভাড়া কার্যকর নয়। আমরা এ ভোগান্তির অবসান চই। এ তো গেল নাফিস ইকবালের কথা। তার মতো অবস্থা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর। যারা দিনের পর দিন এ ভোগান্তি সহ্য করে আসছেন। সবার একই দাবি- ২৪ ঘণ্টা হাফ ভাড়া কার্যকর হওয়া।

 

এর আগে ছাত্রদের হাফ ভাড়া নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যা মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায়। ২৯ নভেম্বর ২০২১। রামপুরায় তুরাগ বাসের চাপায় শিক্ষার্থী মাঈনুদ্দিন ইসলাম নিহত হন। ছাত্রের সঙ্গে গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাস ভাড়া নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন বাসের হেলপার। পরে তাকে ধাক্কায় দিলে রাস্তায় পড়ে যান এ শিক্ষার্থী। এরপর চলন্ত বাস তার মাথার ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন ড্রাইভার। এতে ঘটনা স্থলেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় উত্তেজিত ছাত্র-জনতা বেশকিছু বাসে আগুন দেন। এছাড়া পরদিনও সড়ক অবরোধ করে। এতেও ভোগান্তি থামেনি। কয়েকদিন পর আবারো আগের রূপে ফিরে গেছে বাস কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তির অবসান নিয়ে টানা আন্দোলনের মুখে ছাত্রদের বাস ভাড়া অর্ধেকের দাবি মেনে নেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে জুড়ে দেয় কয়েকটি শর্ত। শর্তগুলো হলো ঢাকার বাইরে হাফ ভাড়া নেয়া হবে না। হাফ ভাড়া দেয়ার সময় অবশ্যই শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখাতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাফ ভাড়া কার্যকর থাকবে। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটিসহ অন্যান্য ছুটির সময় ছাত্রদের হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না। মূলত এ শর্ত বেঁধে দেয়ার কারণেই বেকায়দায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ভোরের আকাশকে বলেন, ছাত্রদের কাছ থেকে নিয়ম মেনে হাফ ভাড়া নেয়া হয়। চুক্তিতে যেমন ছিল, সেভাবেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। রাত ৮টার পর তারা হাফ ভাড়ার সুবিধা পবে না। যতক্ষণ ছাত্র থাকবে, ততক্ষণই ছাত্ররা এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এরপর আর কোনো সুবিধা নয়। ছুটির দিনগুলোয়ও তারা এ সুবিধা পাবে না।

 

সন্ধ্যার পর বা ছুটির দিনে তাদের বিবেচনায় কেন ছাত্রত্ব থাকবে না- এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এসব বিতর্কে যেতে চাই না। শর্তের বাইরে আমরা যাব না। ছাত্রদের কাছ থেকে যেভাবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, এভাবেই করা হবে। এর আগে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ছাত্রদের দাবির মুখে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ভাড়া অর্ধেক করার বিষয়টি কার্যকর হয়। সেদিন সংগঠনটির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, হাফ ভাড়া কার্যকরের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন তারা। সব পরিবহন মালিকদের প্রতি এবং শ্রমিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবেÑ ছাত্ররা যেন হাফ ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারে, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করার জন্য।

 

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনা করে, বিভিন্ন সভা করে, মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। দেশবাসীকে আমরা জানাতে চাই। আমরা হাফ ভাড়া কার্যকর ছাত্রদের জন্য করে দিলাম।’ এর আগে হাফ ভাড়া কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছিল মালিক সমিতি।

 

সেই অবস্থান থেকে পরিবহন মালিকরা সরে এসেছেন কিনা- এমন প্রশ্নে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা সে দাবি এখনো করতে চাই। কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ বাসের মালিক গরিব। অনেক মালিক রয়েছেন, যার একটিমাত্র গাড়ি রয়েছে, সেই আয় দিয়ে তার সংসার চলে, তার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চলে। পলে আমরা চাইলেই সব পারি না।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে, আজমেরী পরিবহনের কন্ডাক্টর নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা রাত ৮টার পর আর হাফ ভাড়া নিই না। মালিকরা যেভাবে বলে দিয়েছেন, আমরা তাই করি। তারা বললে আমরা সবসময় হাফ ভাড়া নেব।

 

ভোরের আকাশ/আসা