logo
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৫০
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং
উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতি: ৭ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫ লাখ মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক

উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতি: ৭ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫ লাখ মানুষ

ঘণ্টায় প্রায় একশ’ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে আঘাত হানছে ঝুর্ণিঝড় সিত্রাং। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ঝুর্ণিঝড়ের অগ্রগবর্তী অংশ সোমবার সন্ধ্যায় উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে। মঙ্গলবার ভোর নাগাদ এটি উপকূল অতিক্রম করে চলে যাবে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এর গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। এটি মূলত পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে বরিশাল, চট্টগ্রাম উপকুল দিয়ে অতিক্রম করবে। আঘাত হানার সময় অমাবশ্যা তিথি থাকায় ৫ থেকে ৮ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। তবে এটি স্থলভাগ অতিক্রমের সময় অধিকহারে ঝড়ো হাওয়া বৃষ্টিপাত হবে। এরপরই ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে।

 

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলায় শুরু হয়েছে ব্যাপক ঝড় বৃষ্টি। এর প্রভাবে সারাদেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

 

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ব্যাস প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার। এর কেন্দ্রের অবস্থান ২শ’ কিলোমটারের মধ্যে। ফলে অগ্রবর্তী অংশ কেন্দ্রে অনেক আগেই উপকূলে আঘাত হানছে। কিন্তু মূল অংশ আজ ভোর নাগাদ উপকূল অতিক্রম করবে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, সিত্রাং বৃষ্টিপাত ঝরাতে ঝরাতে স্থলভাগের কাছাকাছি আসবে। ল্যান্ডের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন হয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হবে। সিত্রাং স্থলভাগে আঘাত করার সময় এর বাতাসের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার হতে পারে বলেও জানান আজিজুর রহমান।

 

এদিকে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তারা জানায় এসব বিমান বন্দর সোমবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একই কারণে সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর ৭ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে ২৫ লাখ মানুষ ঠাঁই নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

 

তিনি জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলায় এ ঝড় তাণ্ডব চালাতে পারে। সোমবার সকাল থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

 

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা হাওয়া ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

 

অপরদিকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে।

 

তারা জানান, তিন কারণে সিত্রাং ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে এখন অমাবশ্যার তিথি বিরাজ করছে। অমাবস্যার সময় চন্দ্র ও সূর্য একই দিক থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। যার কারণে পৃথিবীর বুকে যে জলভাগ আছে, তার ওপর অতিরিক্ত আকর্ষণ তৈরি হয়। এতে জলভাগ উত্তাল হয়ে পড়ে। তারা জানান, সিত্রাং বড় আকারের ঘূর্ণিঝড়। এর সঙ্গে অমাবশ্যা তিথি, বায়ু চাপের আধিক্য, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের কারণে বড় আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান বলেন, সিত্রাংয়ের অগ্রবর্তী অংশের আচরণ দেখে ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য প্রবল প্রভাবের বিষয়টি আঁচ করা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির মূল শরীর  সামনের দিকে আসবে, তখন পরিস্থিতি আরো নাজুক হতে পারে।

 

তিনি জানান, এবার বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়, যা জলভাগের ওপর চাপ তৈরি করে।

 

মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। একই সঙ্গে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া। পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

 

সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

 

এদিকে সারাদেশে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর নদীবন্দর তিন নম্বর নৌ বিপদ সংকেত রয়েছে আর অন্যান্য জেলার নদীবন্দর গুলোতে দুই নম্বর সংকেত রয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘সকালে চাঁদপুর রুটে কিছু লঞ্চ চলাচল করলেও সোমবার দুপুর থেকে সারাদেশে লঞ্চসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নতি হলে পরবর্তীতে নৌযান চলাচলের ঘোষণা দেওয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা