ঢাকা: বিশ্বের বড় ও দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের তালিকায় অনেক আগেই স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সামগ্রিক আন্তর্জাতিক সূচকগুলোতে বিশে^র অনেক উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে এই দেশ। ১৫টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আইএমএফের তথ্যের আলোকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এর অবস্থান দ্বিতীয়।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ, ইলিশে প্রথম, তৈরি পোশাকে দ্বিতীয়, প্রবাসী আয়ে অষ্টম, সবজিতে তৃতীয়, আলুতে ষষ্ঠ, কাঁঠালে দ্বিতীয়, আমে অষ্টম, পেয়ারায় অষ্টম, পাট রপ্তানিতে প্রথম ও উৎপাদনে দ্বিতীয়, ছাগলের দুধে দ্বিতীয়, মিঠাপানির মাছে তৃতীয়, আউটসোর্সিংয়ে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে দশম এবং সাইকেল রপ্তানিতে অষ্টম স্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ।
আয়তনে ছোট এবং বেশ ঘনবসতিপূর্ণ হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরে সীমিত সাধ্য নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উত্থান ঘটেছে, তা বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের মতো বড় দেশের পরেই উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের নাম। কয়েকটি ক্ষেত্রে তো চীন-ভারতকে পেছনে ফেলে প্রথম অবস্থানে পৌঁছে গেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ১৫টি খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান জানা গেছে।
ধান উৎপাদনে চতুর্থ : যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের হিসাবে, দেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ কোটি ২৬ লাখ টন ধান উৎপন্ন হয়েছে, যা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। চীন ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টন উৎপাদন করে প্রথম আর ভারত ১১ কোটি ৬৪ লাখ টন উৎপাদন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
ইলিশে প্রথম : সারাবিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই বাংলাদেশে হচ্ছে, যা পরিমাণে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। চার বছর আগেও বিশ্বে মোট ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬৫ শতাংশ। ইলিশ উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয়, মিয়ানমার তৃতীয়। এ ছাড়া ইরান, ইরাক, কুয়েত, পাকিস্তানেও সামান্য ইলিশ উৎপাদন হয়।
তৈরি পোশাকে দ্বিতীয় : তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পোশাক রপ্তানিতে প্রথম হচ্ছে চীন এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম।
প্রবাসী আয়ে অষ্টম : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাদের বেশির ভাগই শ্রমিক। নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ তারা দেশে পাঠান মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী-পুত্র-পরিজনদের কাছে। প্রবাসী আয় আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আর প্রথম স্থানে ভারত এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন।
সবজিতে তৃতীয় : সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থান চীনের, দ্বিতীয় স্থান ভারতের। দেশে বর্তমানে ৬০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, যার সঙ্গে জড়িত ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার।
আলুতে ষষ্ঠ : আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ষষ্ঠ। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টন। ৯ কোটি ১৪ লাখ টন নিয়ে বিশ্বে প্রথম এখন চীন, আর ৪ কোটি ৯৭ লাখ টন নিয়ে দ্বিতীয় হচ্ছে ভারত।
কাঁঠালে দ্বিতীয় : বিশ্বে বছরে ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। এ ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ১০ লাখ টন। সর্বোচ্চ ১৮ লাখ টন কাঁঠাল হয় ভারতে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড।
আমে অষ্টম : বাংলাদেশ এখন বিশ্বে আম উৎপাদনে অষ্টম। বছরে উৎপাদন হয় ২৪ লাখ টন। ১০ বছর আগে ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন নিয়ে অবস্থান ছিল দশম। আম উৎপাদনে সবার ওপরে ভারত। তাদের উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কোটি টন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন।
পেয়ারায় অষ্টম : ১০ লাখ ৪৭ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন করে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম স্থানে। ১ কোটি ৭৬ লাখ টন নিয়ে ভারত প্রথম এবং ৪৪ লাখ টন উৎপাদন করে চীন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
পাট রপ্তানিতে প্রথম, উৎপাদনে দ্বিতীয় : এক সময়ের ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। উৎপাদনের পরিমাণ ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টন, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪২ শতাংশ। প্রায় ২০ লাখ টন উৎপাদন করে প্রথম ভারত। ভারতে হয় বিশ্বের ৫৫ শতাংশ উৎপাদন। ৪৫ হাজার টন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে চীন।
ছাগলের দুধে দ্বিতীয় : এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশ হচ্ছে ভারত ও চীন।
মিঠাপানির মাছে তৃতীয় : মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। এফএওর মতে, দেশে মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয় বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ। ১৬ শতাংশ নিয়ে প্রথম চীন, ১৪ শতাংশ নিয়ে ভারত দ্বিতীয়।
আউটসোর্সিংয়ে দ্বিতীয় : শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা ফ্রিল্যান্স বা আউটসোর্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এখন। ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের চুক্তি করে সেই কাজ শেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছয় লাখ, যা শতকরা হারে বিশ্বের প্রায় ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ এ খাতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যায় প্রথম হচ্ছে ভারত।
চা উৎপাদনে দশম : বাংলাদেশ বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদনকারী দেশ। চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১৮৪০ সালে চা চাষ শুরু হয়। বেশ কয়েক বছর গবেষণা করার পর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় চা এস্টেট থেকে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে।
সাইকেল রপ্তানিতে অষ্টম : ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে উঠে গেছে। আর গোটা বিশ্বে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ কোটি ৮ লাখ ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
ভোরের আকাশ/আসা