বিজয়ের চেতনা এবং দল ও অঙ্গ সংগঠনের কাউন্সিল ও সম্মেলনের মাধ্যমে জনসমাগম ঘটিয়ে মাঠ দখলে রেখে ২০২২ সাল পার করতে চায় আওয়ামী লীগ। কাউন্সিল ও জনসমাবেশের বিষয়টি অক্টোবরে আরো বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এতে একদিকে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে থানা, জেলা ও বিভাগীয় নেতাকর্মীদের আন্তঃযোগাযোগ বাড়ছে, অন্যদিকে সারা দেশে জনসমাগম ঘটছে। ফলে বিএনপির চলমান বিভাগীয় সমাবেশের জবাবে আওয়ামী লীগকে বাড়তি জনসমাবেশ ঘটাতে হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর কাউন্সিল ও সম্মেলনের হিড়িক পড়েছে। বিভাগীয়, জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে শো-ডাউনসহ নানান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দখলেই থাকছে দেশের গ্রামাঞ্চলের পথ-ঘাট, মাঠ-প্রান্তর এবং শহরের অলিগলি ও নির্ধারিত সমাবেশস্থল। নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকছে সারা দেশ। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কাউন্সিলমুখী নেতাকর্মীদের এমন পদচারণায় অবাধে মাঠে নামার অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। দেশের যেখানেই বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামার চেষ্টা করছেন, সেখানেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে। আর বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের চেতনা ও আবহ চিরাচরিতভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকে।
আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নিয়ে অক্টোবর থেকে রাজনীতির মাঠ দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জেলা ও থানা পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে।
আগামীকাল ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠক থেকে আগামী ডিসেম্বরেই শুধু নয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপিকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত হবে। দুদিনব্যাপী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সারা দেশের কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি ছাড়াও ব্যাপক কর্মী-সমর্থকদের সমাগম হবে।
এ ছাড়া ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কাউন্সিল হবে। এসব কাউন্সিল উপলক্ষে নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত ব্যাপক শো-ডাউন থাকবে আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ব্যাপক কর্মসূচি থাকবে দলটির। অতএব একের পর এক সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিল থাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশে দলটিকে একক শো-ডাউন করার সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির সমাবেশ হবে। বিএনপির বড় জমায়েতের জবাব দিতে ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা কাউন্সিল রাজধানীতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওই দিন ব্যাপক শোডাউন করতে সব উপজেলার নেতা ও দলের এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক বর্ধিত সভাও করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে দলের জেলা ও সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিল এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘিরে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে সংগঠনটি। সেখানে বড় জমায়েত করার লক্ষ্যে গত ২২ অক্টোবর সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ঢাকায় বর্ধিত সভা করেছে যুবলীগ। সমাবেশ সফল করতে ১০টি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন নভেম্বর নাগাদ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সম্মেলন ঘিরে এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে সক্রিয় রাখা হবে।
এভাবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মোকাবিলায় এমন পরিকল্পনা করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন অক্টোবরে শুরু হলেও তা নভেম্বর পর্যন্ত গড়াবে। শুরুতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে কীসের পাল্টাপাল্টি। প্রতিদিন আমাদের প্রোগ্রাম হচ্ছে। লাখ লাখ লোক দেখবেন? আসেন। ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা সম্মেলন করব, সেখানে আসেন। ফখরুল সাহেবকে (বিএনপির মহাসচিব) আমন্ত্রণ জানিয়েছি, একটা জেলা সম্মেলনে কত মানুষ হয় দেখার জন্য। আজ তোমরা বড় বড় কথা বলছ। রাজপথে সব মোকাবিলা হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে খেলা হবে।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির হুঙ্কার দীর্ঘদিন ধরেই শুনছি। গণতান্ত্রিক অধিকারের জায়গা থেকে তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করতেই পারে। কিন্তু কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা করলে সেটি প্রশাসন দেখবে। আওয়ামী লীগ জনমানুষের দল। তাই ১০ ডিসেম্বর ক্ষতমতাচ্যুতির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা বিএনপির সমাবেশের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো কর্মসূচি রাখছি না। তবে আমাদের ডিসেম্বর পর্যন্ত দলীয় কর্মসূচি থাকবে। আমরা রাজপথেই বিএনপিকে মোকাবিলা করব।
ভোরের আকাশ/আসা