বরিশাল: বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শনিবার। প্রথমে চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে হলেও ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে কর্মসূচির পূর্বে পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পড়ে দলটি।
বরিশালেও তাই। এক সপ্তাহ পূর্বেই ৪ ও ৫ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। একই সময় তিন চাকার যানেরও ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সর্বশেষ লঞ্চ স্পিডবোট বন্ধ করার ঘোষণা এসেছে। এত প্রতিবন্ধকতার পরেও বিএনপির টার্গেট বরিশালে রেকর্ড গড়ার।
জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া মহানগরীর মধ্যে নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। দুই দিন আগে থেকে সমাবেশ স্থলে অবস্থান করছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী ।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, আন্দোলন এখন এমন একটি পর্যায়ে গিয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুতের জন্য মানুষ দিশেহারা। বিএনপি ক্ষমতা যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে।
গাড়ি লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়াতে সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, প্রভাব পড়ার জন্যই তো এত অপচেষ্টা, আমরা ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল করব। আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো, গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী বরিশালে এসেছেন। মাঠের মধ্যে রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া, মিছিল চলছে।
হোটেলগুলো থেকে নেতাকর্মীদেরকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন আলাল। তিনি বলেন, রাতে পুলিশের রেড চলছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে, ভয় দেখানো হচ্ছে পথে পথে। কোনো বাধাই কাজ হবে না। ইনশাল্লাহ বরিশালের সমাবেশ অন্য যেকোনো সমাবেশ থেকে উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গাড়ি বন্ধ করার পরেও সমাবেশ তো আটকে থাকেনি। পূর্বের সমাবেশগুলো সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে সফল করেছি, বরিশালেও সফল করব।’
খেয়া নৌকাও বন্ধ:
বাস-লঞ্চ এবং থ্রি হইলার বন্ধের পর বরিশালের বিভিন্ন স্থানে খেয়া নৌকা চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে নগরীর চরকাউয়া খেয়া এবং কাটাদিয়া খেয়া চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এই খেয়া নৌকায় চলাচল করেন হাজার হাজার মানুষ। আকস্মিক খেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
একমাঠেই বিএনপি-প্রশাসনের প্রস্তুতি :
বরিশালে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে একসঙ্গে চলছে বিএনপি ও প্রশাসনের পৃথক দুটি কর্মসূচির জন্য মাঠ গোছানো, মঞ্চ তৈরি ও প্যান্ডেল সাজানোর কাজ। উদ্যানের পূর্বপ্রান্তে স্থায়ী মঞ্চ ধরে চলছে স্থানীয় প্রশাসনের প্যান্ডেল তৈরির কাজ। এর বেশ খানিকটা দূরে উত্তর পশ্চিম প্রান্তে চলছে বিএনপির বিভাগীয় মহা সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, গত সোমবার আমাদের বেলস পার্কের (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। মাঠের একাংশে তাদের একটি মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে আমাদের জনসভা করতে হবে। স্থায়ী মঞ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে না, যতটুকু অংশ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে তাতে আমাদের জনসমুদ্রের অর্ধেকও সংকুলান হবে না।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন। বরিশালে উদ্বোধন হবে ১৬টি সেতু। সে লক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাই বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মূলমঞ্চ ঘিরে চলছে তার প্রস্তুতি। শনিবার (৫ নভেম্বর) আবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ। আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হলেও মাঠের পুরো অংশ বিএনপি ব্যবহার করতে পারছে না।
মাঠেই জুমার নামাজ:
বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) মাঠেই পৃথক দুটি জামায়াতে জুমার নামাজ আদায় করেছেন।
ভোরের আকাশ/আসা