বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন সালাউদ্দিন ভূইয়া। ওইসময়ের স্মৃতি স্মরণ কেঁদে ফেলেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সালাউদ্দিন বলেন, আমি ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে একটি দোকানে কাজ করতাম। কাজ শেষে বাসা যাওয়ার জন্য রওনা দিই। গাড়ি যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। সেই বোমা হামলায় অনেকে আহত হন। আমার মুখ ও হাত পুড়ে যায়।
আবেগজড়িত কণ্ঠে সালাউদ্দিন বলেন, এখন লোকে আমাকে দেখলে ভূত মনে করে। আমি খুব সুন্দর ছিলাম, যেখানে চাকরি জন্য যেতাম, সেখানে আমার চাকরি হতো। এখন আমাকে কেউ কাজ দেয় না। গাড়িতে উঠলে আমার পাশে কেউ বসতে চায় না। কারণ আমাকে পাগল মনে করে। আমার কাজ করার শক্তি আছে। কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। আমার দুই ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের একটা কিছুর ব্যবস্থা করুন। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। আমাকে একটটু কাজ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবে বলতে থাকেন তিনি। তার বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেঁদে ফেলেন। শুধু সালাউদ্দিনই নন, এমন অসংসখ্য মানুষ ২০১৩-১৫ সালের বিএনপি-জামায়েতের পেট্রলবোমা হামলায় শিকার হন। শুধু তাই নয়, তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে কেউ সন্তান, কেউ স্বামী, কেউ বা হারান স্ত্রীকে। আবার অনেকে এ হামলায় নিঃস্ব হয়েছেন।
রোববার দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পেট্রলবোমা হামলায় আহত ও নিহতদের স্বজনরা তাদের এমনই দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ফটো সাংবাদিক আবু সাঈদ তামান্না ওইসময় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সাংবাদিক আবু সাঈদ তামান্না বলেন, ওইসময়ে আমি মৃত্যুর মুখে পড়ে যাই। সকালে আমার কাছে একটা ফোন আসে যে তারা পেট্রলবোমা বিতরণ করছে। তারা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে তাড়া করে ছুরিকাঘাত করে। আমরা সবসময় কাজের সুন্দর পরিবেশ চাই। বিএনপি-জামায়াত এখন আবার শুরু করেছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সেই সময়ে সন্তানকে হারিয়েছেন রমজান আলী।
তিনি বলেন, আমার ছেলে কী অপরাধ করেছিল। আমার ছেলে শরীয়তপুর থেকে ঢাকা আসে। আমার চোখের সামনেই ছেলেকে জ্বালিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমি তো রাজনীতি করি না, আমার ছেলে তো রাজনীতি করেনি। বিএনপি-জামায়াত আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
স্বামীহারা নাসরিন আরা বলেন, আমি স্বামী বিজিবি সদস্য ছিলেন। তাকে কর্মরত অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমার সন্তানরা তাদের বাবা হারানোর যন্ত্রণা ভুলা যাবে না। আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করেনি। সে তো দেশের কাজে নিয়োজিত ছিল। আমি চাই আমার স্বামীর মতো আর কাউকে যেন সন্ত্রাসীরা হত্যা করতে না পারে। আমি বেঁচে থাকতেই আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
স্বামীহারা বিনা সুলতানা বলেন, ২০১৩ সালে ৪ নভেম্বর পেট্রলবোমা হামলায় আমার স্বামী মারা যায়। আমার দুটি সন্তান আছে। আমার সন্তানদের বাঁচাতে গার্মেন্টে কাজ শুরু করি। আমি ১৪-১৫ ঘণ্টা ডিউটি করে সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার সন্তানরা কী অপরাধ করেছে? আমার সন্তানরা স্কুলে গিয়েছিল, বাড়িতে ফেরার আগে আমার স্বামীর লাশ চলে আসে। তিনি বলেন, গার্মেন্ট মালিকরা আমাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। যারা আমার মতো অসহায়কে কাজের সুযোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার মনোবল দিয়ে আমার সন্তানদের মানুষ করব। যারা এ বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পেট্রলবোমা হামলার শিকার হয়েছিল সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন।
সে সময়ের ভয়ংকর মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর মুহূর্ত। আমি হাইকোর্ট থেকে বাসায় যাওয়ার সময় বাসটি যখন শাহবাগের শিশুপার্ক এলাকায় এলো তখন বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। আমার হাত মাকড়সার জালের মতো পুড়ে যায়। আমাকে একজন রিকশাচালক ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। আমি এখনো সেই যন্ত্রণা নিয়ে চলছি। আমাদের সবার আকুতি, জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্যের বিচার চাই। প্রয়োজনে আমি সাক্ষ্য দেব।
ভোরের আকাশ/আসা