logo
আপডেট : ১২ নভেম্বর, ২০২২ ১৩:৩৪
রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা
এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া

রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন বগুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন গাছি। ছবিটি শুক্রবার দুপচাঁচিয়ার ভাটাহার গ্রাম থেকে তোলা

এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া: শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে আসে হেমন্ত। আর এই হেমন্তকালে ভোরবেলা ও সন্ধ্যায় গ্রামাঞ্চলে হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সকাল ও সন্ধ্যায় শীত শীত অনুভূতি। এই শীতের সকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের জন্য চলতি মৌসুমে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, কাহালু, নন্দীগ্রাম উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজারো খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের গাছিরা। তারা সারাবছর অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে খেজুর গাছের রস ঘরে আনার জন্য ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছে।

 

বগুড়া জেলার এই তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির আঙিনায়, ঝোপ-ঝাড়ে, ফসলি জমির ধারে, এবং রাস্তার দু’পাশে রয়েছে অসংখ্য খেজুর গাছ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মৌসুমী গাছিরা কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে ওঠে তাদের নিপুণ হাতে গাছের ছাল (চাঁচ) তুলছেন। পরে নলি বসানোর কাজ শেষে রস সংগ্রহ করবেন। প্রথমে ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালি অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেয়া। জেলার তিন উপজেলার পৌরসভাসহ বেশ কয়েককটি ইউনিয়নে ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং সরকারি রাস্তা ও পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অসংখ্য খেজুর গাছ রয়েছে। এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি গাছ থেকে ৪ থেকে ৬ লিটার পর্যন্ত রস সংগ্রহ সম্ভব হয়। নন্দীগ্রামের গাছি আব্দুল করিম বলেন, আগেকার দিনে একটি খেজুর গাছ থেকে ৭-৮ কেজি পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন আগের মতো রস হয় না। বরং খেজুর রস অনেক কমে গেছে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে।

 

শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ ততই বাড়বে। আবহমান কাল থেকে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে মানুষদের শীতের সকালের নাস্তাতে মুড়ির সাথে রস না হলে মনে হয় বেমানান কিন্তু এখন আর তেমনটি দেখা মেলে না পল্লীগ্রামে। শীতকালীন পিঠাপুলি, পায়েসসহ রকমারি খাবার তৈরিতে এখনো রস ও খেজুর গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাছিরা খেজুরের লালিগুড় তৈরি ছাড়াও পাটা গুড়, বাটি গুড় এবং রসপ্রিয় মানুষদের জন্য ফেরি করে রস বিক্রয় করে থাকে এ সময়। দেশজুড়ে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় গাছিদের বাড়ি থেকেই খুচরা ও পাইকারি গুড় বিক্রি করে সময় ও অর্থ দুটোই লাভবান হন এ অঞ্চলের গাছের মালিক ও গাছিরা।

 

তবে গাছিদের অভিযোগ, খেজুর গুড় সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় বেশি দিন বাড়িতে রাখা যায় না।

 

স্থানীয় বাসিন্দা ও গাছিরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বিবর্তনে, বন বিভাগের নজরদারি না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ।

 

দুপচাঁচিয়া সদর ইউনিয়নের ভাটাহার গ্রামের গাছি মোবারক হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমি এ কাজ করছি। চলতি মৌসুমে ৫০টির মতো গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করেছি। চুক্তিতে অন্যের গাছ এবং রাস্তার দুই পাশে সরকারি গাছ থেকে আমি রস সংগ্রহ করে থাকি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগের মতো এখন আর রস হয় না। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণে গুড় উৎপাদন সম্ভব।’

 

জেলার দুপচাচিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজেদুল আলম বলেন, শীতের আগমনী বার্তায় দুপচাঁচিয়ায় খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত গাছিরা। খেজুর গাছ যেকোনো স্থানে লাগানো যায়। এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। ফসলের কোনো ধরনের ক্ষতিও করে না। তবে শীত মৌসুমে খেজুর রস থেকে নিপাহ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকায় গাছিদের সতর্কতার সাথে রস সংগ্রহ করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা