সারাদেশে গতবছর ধর্ষণের ৮১০টি, দলবদ্ধ ধর্ষণ ২২৫টি, ধর্ষণের চেষ্টার ১৯২টি ঘটনা ঘটেছে। ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই এই যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। নারীদের তুলনায় কন্যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ততা বেশি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় সেগুনবাগিচায় সংগঠনের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০২১ : ধর্ষণ, দলবদ্ধধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও যৌতুক’ শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। এসময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাাড. মাসুদা রেহানা বেগম, সম্পাদকম-লী, সাংবাদিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।
সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ২০২১ সালে ধর্ষণের ৮১০টি, দলবদ্ধ ধর্ষণ ২২৫টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১৯২টি, উত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি ৯৬টি ও যৌতুক ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। বিগত বছরগুলোর মত এবছরও ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার সংখ্যা বেশি। নারীদের তুলনায় কন্যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। ১৪-১৮ বছরের কন্যারা ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও দলবদ্ধ ধর্ষণে শিকার হয়েছে যথাক্রমে ১৮, ১১ ও ৩১ শতাংশ। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ১০-১৩ বছরের শিশুর সংখ্যা ২২ শতাংশ। যৌতুকের ক্ষেত্রে ১৮-২২ বছরের নারীরা সাধারণত বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। এই হার ২২ শতাংশ। কন্যাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই হার ৪৫%, দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৫২% এবং উত্ত্যক্তের ক্ষেত্রে ৬৭ %। কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহিণীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুকের জন্য ৮৩%, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, উত্ত্যক্তকরণ, ধর্ষণের চেষ্টায় যথাক্রমে ৩৬%, ৩৭%, ১৭% এবং ৪৬% গৃহিণী নির্যাতনের শিকার হন। এই গবেষণায় ১৮ বছরের কম বয়স্কদের কন্যা এবং ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিচিত মানুষ, বিশেষ করে নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়।
লক্ষ্যণীয় যে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ততা বেশি। অভিযুক্তদের মধ্যে ২৬ শতাংশের বয়স ১১-৩০ বছর। দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশের বয়স ১৬Ñ৩০ বছর এবং উত্ত্যক্তের ঘটনায় ৮৫ শতাংশের বয়স ১৬Ñ৩০ বছর। কন্যা ও নারী সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে চালক দ্বারা যথাক্রমে ৫ ও ৩ শতাংশ। অপরদিকে উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা ক্ষেত্রে, নারী ও কন্যা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষক দ্বারা, যা যথাক্রমে ১৭ ও ১৩ শতাংশ।
এবিষয়ে পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নানা ধরণের গবেষণা করে থাকে। তবে এটা ঠিক গবেষণা নয়, সমীক্ষা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গবেষণা থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরণ (প্যাটার্ন) বা কোন ধরণের অপরাধ বেশি হয় তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মূল কারণ নারীর প্রতি অধস্তন মনোভার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। একটা সময় পারিবারিক সহিংসতা বেশি ছিল। কিন্তু এখন ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ বেড়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, সামাজিক পরিসরে নারী বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যারা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি তরুণ।
পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌতুক, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টা নারী ও কন্যা নির্যাতনের এই পাঁচটি ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে দেশের ১২টি জতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ এই সমীক্ষা করে।
ভোরের আকাশ/আসা