শামীম হাসান: এক দিন পরই বিশ্বকাপ ঘিরে মেতে উঠবে বিশ্বকাপ ক্রীড়াঙ্গন। অংশ নেয়া ৩২টি দল এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে আয়োজক দেশ কাতারে। মূল টুর্নামেন্ট শুরু না হলেও এরই মধ্যে অংশ নেয়া দলগুলোর তারকা খেলোয়াড়দের ঘিরে শুরু হয়ে উৎসব। তবে সব উৎসবের কেন্দ্রে রয়েছে ট্রফি।
এ ট্রফি জিততেই গত চার বছর ধরেই কয়েকটি দল পরিশ্রম করে চলেছে। শক্তি ও অভিজ্ঞতার পার্থক্যের কারণে অর্ধেক দল প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেবে আর অর্ধেক দল সামনের দিকে অর্থাৎ শিরোপ জয়ের লড়াইয়ে টিকে থাকবে। এবারের বিশ্বকাপে কোন দলগুলোর কেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তা একনজরে জেনে নেয়া যাক।
বিশ্বকাপ ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে নেদারল্যান্ডস ও সেনেগাল। তাদের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডর। এই গ্রæপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার দৌড়ে রয়েছে নেদারল্যান্ডস ও সেনেগাল। এ দুই দলের সঙ্গে কাতার ও ইকুয়েডরের পার্থক্যটা এতটাই বেশি, তেমন কোনো অঘটন হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
গ্রæপ ‘বি’ থেকে ফেভারিট হিসেবে শুরু করছে ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। অতীত পারফরম্যান্স ও র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে এ দুই দলের সম্ভাবনা বেশি। তবে অন্যসব গ্রæপে দলগুলোর পার্থক্য যতটা বেশি, এই গ্রæপে পার্থক্য ততটাই কম। ফলে আগে-ভাগে নিশ্চিত করে বলা কঠিন কোন দুটি দল দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে।
র্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে থাকলেও ইরান ও ওয়েলস মোটেও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো গ্রæপ ‘সি’তে ফেভারিট হিসেবেই শুরু করবে এটা বলাই যায়। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে তাদের সৌদি আরব ও পোল্যান্ডের সঙ্গে লড়তে হবে। তুলনামূলকভাবে সৌদি আরব সহজ প্রতিপক্ষ হলেও পোল্যান্ড মরণকামড় দিতে প্রস্তুত থাকবে। ফলে আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোকে শুরু থেকেই সাবধান হওয়ার বিকল্প নেই।
গ্রæপ ‘ডি’ থেকে ফ্রান্স ও ডেনমার্কের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো। তবে অস্ট্রেলিয়ার অঘটন ঘটানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রæপের অপর দল তিউনিশিয়া। গ্রæপ ‘ই’তে অঘটনের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে স্পেন ও জার্মানি এই গ্রæপ থেকে সহজেই দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌছে যাবে।
এই গ্রæপে তাদের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে জাপান ও কোস্টারিকা। বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া গ্রæপ ‘এফ’ থেকে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার জোরালো দাবিদার। তাদের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে মরক্কো ও কানাডা। এ দুটি দলেরই অঘটন ঘটানোরও সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রæপ ‘জি’ থেকে ব্রাজিল ও সুইজারল্যান্ড দ্বিতীয় রাউন্ডে পা দিয়েই রেখেছে বলা যায়।
তবে গ্রæপের অপর দুই দল সার্বিয়া এবং ক্যামেরুন যথেষ্ট শক্তিশালী। ফলে ব্রাজিলের জন্য পথটা সহজ হলেও সুইজারল্যান্ডের সামনের পথটা বেশ কঠিন হতে পারে। পর্তুগাল ও উরুগুয়ে ‘এইচ’ গ্রæপ থেকে সেরা হয়ে হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারে। তবে তাদের পথটা যে সহজ হবে, তা নয়।
কেননা গ্রæপের অপর দুই দলের নাম দক্ষিণ কোরিয়া ও ঘানা। দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার সেরা দল। ইউরোপের অনেক দলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘এ’ গ্রæপের চ্যাম্পিয়ন ‘বি’ গ্রæপের রানার্সআপের মুখোমুখি হবে। আর ‘বি’ গ্রæপের চ্যাম্পিয়ন ‘এ’ গ্রæপের রানার্সআপের মুখোমুখি হবে। ফলে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ড ও সেনেগাল মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খুব বেশি অঘটন না হলে নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ‘সি’ ও ‘ডি’ গ্রæপে আর্জেন্টিনা ডেনমার্কের এবং ফ্রান্স মেক্সিকোর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। স্বাভাবিক বিবেচনায় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেতে পারে।
‘ই’ ও ‘এফ’ গ্রæপে গ্রæপ ম্যাচ শেষে স্পেন ক্রোয়েশিয়ার এবং জার্মানি বেলজিয়ামের মুখোমুখি হতে পারে। এখান থেকে স্পেন ও জার্মানি শেষ আটে পৌঁছাতে পারে। ‘জি’ ও ‘এইচ’ গ্রæপ থেকে ব্রাজিল ও উরুগুয়ে এবং সুইজারল্যান্ড ও পর্তুগালের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আবার ব্রাজিল-পর্তুগাল এবং উরুগুয়ে-সুইজারল্যান্ড ম্যাচও হতে পারে। ফলে ব্রাজিলের পাশাপাশি পর্তুগাল বা সুইজারল্যান্ড শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকতে পারে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচগুলো এমন হতে পারে নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল-স্পেন, ইংল্যান্ড-ফ্রান্স, জার্মানি-সুইজারল্যান্ড। এখান থেকে চার দল সেমিফাইনাল, তারপর ফাইনাল। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। যেমন বাদ পড়তে পারে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স এবং জার্মানি।
আবার এ চারটি দলই শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে সেই দিনের পারফরম্যান্স, খেলোয়াড়ের সুস্থতা, তাদের উপস্থিতিসহ আরো অনেক অনেক কিছুর ওপর। সে কারণে কোনো চারটি দল সেমিতে পৌঁছাবে বা তার থেকে আরো এগিয়ে যাবে, সে ব্যাপারে অনুমান না করে অপেক্ষায় থাকাটাই ভালো। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে চ্যাম্পিয়ন দলের প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি