বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে ২৫২ জনে। সেই সঙ্গে এখনও নিখোঁজ আছেন ৩১ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩৭৭ জনকে এবং ব্যাপক প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্পে বাস্তুচ্যুত লোকজনের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭ হাজার ৬০ জনে। ভূমিকম্পে শত শত লোক আহত হয়েছেন এবং ধসেপড়া ভবনে আটকেপড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত সোমবার ভূস্তরের অগভীর ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ইন্দোনেশিয়ার সর্বাধিক জনবহুল প্রদেশ পশ্চিম জাভার সিয়ানজুর শহরের কাছে, যেখানে নিহতদের বেশিরভাগ ভবন ও ভূমিধসে মারা গেছে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চূর্ণবিচূর্ণ বিল্ডিং থেকে মৃতদেহগুলো বের করে আনার সাথে সঙ্গে নিখোঁজদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টার দিকে জোর দেয়া হয়।
ভূমিকম্পের কারণে শহরের রাস্তাগুলোয় বিক্ষিপ্ত প্রতিবন্ধকতার কারণে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে এমন এলাকায় ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো বেঁচে থাকা লোকদের উদ্ধার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কয়েক ডজন উদ্ধারকারীর মধ্যে একজন, ৩৪ বছর বয়সি ডিমাস রেভিয়ানস্যাহ বলেন, উদ্ধারকারী দল ধ্বংসাবশেষের স্তূপ ভেঙে বেসামরিক নাগরিকদের আটকে থাকা জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে আমি মোটেও ঘুমাইনি। তবে আমাকে অবশ্যই উদ্ধার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারণ এমন লোক এখনো রয়েছে যাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ স্থানীয় সামরিক প্রধান রুডি সালাদিন এএফপিকে বলেন, ‘আজ আমাদের ফোকাস হলো ভূমিধসে চাপা পড়া ক্ষতিগ্রস্তদের সরিয়ে নেয়া।’ ‘এখনো আরো কিছু লোক উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা বা বিএনপিবি বলেছে, সোমবার অন্ধকার নেমে আসায় অন্তত ২৫ জন এখনো সিয়ানজুরে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
নিহতদের মধ্যে কয়েকজন ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের ছাত্র এবং অন্যরা তাদের বাড়িতে ছাদ এবং দেয়াল ধসে পড়ে মারা গেছে। ১৪ বছর বয়সি ছাত্র এপ্রিজাল মুলিয়াদি এএফপিকে বলেন, ‘কক্ষটি ধসে পড়ে এবং আমার পা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যায়। সবকিছু দ্রুত ঘটেছিল।’ তিনি বলেন, তার বন্ধু জুলফিকার তাকে নিরাপদে টেনে নিয়ে গিয়েছিল, যে পরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে মারা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে এভাবে দেখে বিধ্বস্ত হয়েছিলাম, কিন্তু আমি তাকে সাহায্য করতে পারিনি।’ বৃহত্তর গ্রামীণ, পার্বত্য অঞ্চলের কিছু অংশে বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মঙ্গলবার অনুসন্ধান অভিযান আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। গতকাল সকাল নাগাদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি পিএলএন সিয়াঞ্জুরের ৮৯ শতাংশ বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করেছে। পশ্চিম জাভার গভর্নর রিদওয়ান কামিল বলেন, ৩০০ জনের বেশি লোক আহত হয়েছে এবং ১৩ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/আসা