নিখিল মানখিন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইতোমধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার দাবি করেছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় দৈনিক মৃত ও শনাক্তের সংখ্যা এবং শনাক্তের হার হ্রাসের ধারাবাহিকতা গত দেড় মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে। দৈনিক মৃতের সংখ্যা তিনজনের নিচে এবং রোগী শনাক্তের হার চলে এসেছে ৫ শতাংশের নিচে। তবে স্বাস্থ্যবিধি পালন অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপে করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
কোনো দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টি বুঝতে কয়েকটি মানদণ্ড ঠিক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে আছে- টানা তিন সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও নতুন রোগী কমতে থাকা, টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকা বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরের ২০ অক্টোবরের পর গত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে কোভিড পজিটিভের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আছে। ২৩ নভেম্বর করোনায় শনাক্ত ৩৩, শনাক্তহার শূন্য দশমিক ৮৭ এবং মৃত্যুর ঘটনা নেই। ১৭ নভেম্বর করোনায় শনাক্ত ৩৭, শনাক্তহার ১ দশমিক ২২ এবং মৃত্যুর ঘটনা নেই। ১০ নভেম্বর করোনায় শনাক্ত ৫২, শনাক্তহার ১ দশমিক ৮৭ এবং মৃত্যুর ঘটনা নেই। ৩ নভেম্বর করোনায় শনাক্ত ১৪০, শনাক্তহার ১ দশমিক ২২ এবং মৃত্যু একজনের। ২৭ অক্টোবর করোনায় শনাক্ত ১৩৭, শনাক্তহার ৩ দশমিক ৬০ এবং মৃত্যু একজনের। ২৩ অক্টোবর করোনায় শনাক্ত ১৩৯, শনাক্তহার ৪ দশমিক ৪৪ এবং মৃত্যু একজনের। ২০ অক্টোবর করোনায় শনাক্ত ২৪৩, শনাক্তহার ৫ দশমিক ৮২ এবং মৃত্যু একজনের।
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গত তিন মাসের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশে করোনায় দৈনিক মৃত ও শনাক্তের সংখ্যা এবং শনাক্তহার ওঠানামা করছে। তবে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০-এর নিচে এবং শনাক্তের হার ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। আর দৈনিক মৃতের সংখ্যা বেশিরভাগ দিনেই শূন্য ছিল। এভাবে গত ২০ নভেম্বরের পর করোনায় দৈনিক নতুন রোগীর সংখ্যা ৩০০-এর নিচে, মৃতের সংখ্যা ১ থেকে ৩ জনের মধ্যে এবং শনাক্তের হার ২ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, গত তিন মাসের বেশিরভাগ দিন দৈনিক মৃতের সংখ্যা শূন্য রেকর্ড হয়ে আসছে।
সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভারতেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কমবেশি নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনা। তিনি বলেন, আজকে আমরা বলতে পারি, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এমনিতেই নিয়ন্ত্রণ হয় না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ হয়। করোনাকালে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান শনাক্তের হার হিসাবে আমরা করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলতে পারি। পরিস্থিতি ভালো, তবে তার মানে এই নয় যে, করোনা চলে গেছে। এখন তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, মাস্ক পরছেন না। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শুরু থেকে দেশের সংক্রমণ চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর ভোরের আকাশকে বলেন, করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে হলে আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। যারা এখনও ভ্যাকসিন নেননি, তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে বলেও জানান ডা. ফরহাদ মনজুর।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল ভোরের আকাশকে বলেন, রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে এসেছে, তার মানে এই নয় যে সংক্রমণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর অর্থ সংক্রমণের প্রকোপ কমেছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময় বিভিন্ন বিধিনিষেধ, বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় ছোট ছোট উদ্যোগের ফলে সংক্রমণ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু খুব আপ্লুত হওয়ার সময় আসেনি। সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আর সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে দ্রুত টিকা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে, তাহলে সংক্রমণের আরেকটি ঢেউ এলেও টিকা অনেকটা রক্ষা করবে বলে জানান ডা. আবু জামিল ফয়সাল।
করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহম্মদ সহিদুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক সময়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এমন সফলতা এসেছে। তবে করোনা সংক্রমণের গতি কখন, কোনদিকে মোড় নেয়, তা বলা মুশকিল। সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ।
ভোরের আকাশ/আসা