logo
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০৭
সচেতনতা বাড়াতে হবে
রোগে মৃত্যুহার বৃদ্ধিতে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
নিখিল মানখিন

রোগে মৃত্যুহার বৃদ্ধিতে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

নিখিল মানখিন: বিভিন্ন রোগের কারণে মৃত্যুহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৮ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। গড়ে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে এ উদ্বেগজনক মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব। মৃত্যুঝুঁকির কারণগুলো উদ্ঘাটন করে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

 

২০২১ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে সারা দেশে নানা রোগে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ২৫২ জন মারা গেছেন। ২০১৯ সালে ৮ লাখ ২২ হাজার ৮৪১ জন মারা যান। সম্প্রতি রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত।

 

প্রতি বছর আরো প্রায় এক থেকে দেড় লাখ মানুষ এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে এ তালিকায়।

 

তিনি জানান, বছরে মৃত্যুও হয় লাখের কাছে। রোজ মারা যান ২৭৩ জন। সে খবর আমাদের নেই। অথচ করোনার মৃত্যুটাকে আমরা সবাই দেখে থাকি। রোজ জানানো হচ্ছে বলে আমরা এটা জানতে পারি। ক্যানসারে কত লোক মারা যান, সেই হিসাবটা খুব একটা লোকে রাখে না।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার নতুন রোগী যোগ হয়, আর প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক কিডনির কারণে ৬৯ জনের মৃত্যু ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০১৭ সালের পর থেকে স্ট্রোক দেশে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

 


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪২ জনের মৃত্যু হয় হৃদরোগজনিত অসুখ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক মৃত্যু ঘটে ৭৬২ জনের।

 

এদিকে বিবিএস জরিপে বলা হয়, ২০২০ সালে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৮ জন মারা গেছেন। আগের বছর এ রোগে মারা যান ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৯ জন। জরিপের তথ্যানুযায়ী, লিভার ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।

 

২০২০ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৮৫০ জন। ২০১৯ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২১ হাজার ৩৭৪ জনের।

 

সম্প্রতি জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, করোনার চেয়ে দেশে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। স্বাস্থ্য অর্থ ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে কোভিডে যে মৃত্যু, অসংক্রামক কোনো কোনো রোগে মৃত্যু তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। শুধু ধূমপানের কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে ৩০০ মানুষের। ক্যানসার, টিবি, হার্ট ডিজিস সবগুলোই অসংক্রামক রোগ। এগুলোর যে মৃত্যুর হার, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে তা কোভিডের তুলনায় ৫ গুণ।

 


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহসান হাবীব হেলাল ভোরের আকাশকে বলেন, ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপে সরাসরি কোনো মৃত্যু হয়নি। কিন্তু এ দুই রোগের কারণে অন্যান্য রোগে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। এ দুই অসুখের কারণে হার্ট ফেইলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে, কিডনি দ্রুত খারাপের দিকে যায়।

 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও হাসপাতালের রোগতত্ত ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪২ জনের মৃত্যু হচ্ছে হৃদজনিত রোগে এবং স্ট্রোকে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে জানান, রোগের কারণে দৈনিক মৃত্যুহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তারা বলছেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৮ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। গড়ে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে এ উদ্বেগজনক মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব। মৃত্যুঝুঁকির কারণগুলো উদ্ঘাটন করে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

 

ভোরের আকাশ/নি