logo
আপডেট : ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৩:৫৩
মৌসুমি কাঁচাফল বিক্রির টাকায় সংসার চলে তাদের
শেরপুর প্রতিনিধি

মৌসুমি কাঁচাফল বিক্রির টাকায় সংসার চলে তাদের

সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী পাহাড় ঘেঁষা। তবে সদর এবং নকলা উপজেলা চরাঞ্চল। চরাঞ্চলের মাটির কৃষির জন্য সৃষ্টিকর্তার এক বিরাট নিয়ামত। এসব চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন মৌসুমি ফল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বিক্রি করা হয়। আর তা দিয়েই চলে প্রায় শতাধিক মৌসুমি ফল বিক্রেতাদের সংসার। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, সহজ কিস্তিতে ক্ষুদ্রঋণ পেলে তাদের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়াতে পারবে।

 

মৌসুমি ফল বিক্রেতারা সাধারনত গ্রামে গ্রামে ঘুরে জলপাই, আম, জাম কাঠাঁল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, আমড়া, জাম্বুরা, তেঁতুল, বেল, আমলকী, কদবেল ও নারিকেলসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের কাছ থেকে গাছচুক্তি হিসেবে কিনে রাখেন। পরে বিক্রির উপযোগী হলে তা সংগ্রহ করে বাছাই করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে পাঠিয়ে বিক্রি করেন।

 

এখানকার ফল অপেক্ষাকৃত বড়, সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নকলার ফলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় প্রতিদিন কয়েক ট্রাক মৌসুমি ফল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে যাচ্ছে। মৌসুমি ফল বিক্রি তথা এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন প্রায় শতাধিক পরিবার। তারা এই মৌসুমি ফলের ব্যবসা করেই তাদের সংসার ও ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ বহন করেন।

 

নকলা উপজেলার চরকৈয়া এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে মোজাম্মেল হক, হযরত আলীর ছেলে রফিকুল ইসলামসহ করিম মিয়া, সাদ্দাম হোসেন, বাবুল মিয়া ও কব্দুল আল ও শহিদুল; জালালপুরের আব্দুল মিয়া, কব্দুল আলী, তারা মিয়া, মস্তু মিয়া, শহিদুল ইসলাম, রতন, আশরাফ আলী, তারা মিয়া, হলকু মিয়া, দুদু মিয়া ও আনার মিয়া; কায়দা এলাকার আবুল মিয়া, গেন্দুক ও রহুল আমিন; সাহাপাড়া এলাকার রুপচাঁন, ধনাকুশা এলাকার আসাদুল, কবুতরমারীর এলাকার হরমুজ আলী, মো. হরু মিয়া ও নকলার লম্বু মিয়াসহ উপজেলার ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার এ ব্যবসার সাথে জড়িত।

 

এসব ব্যবসায়ীরা জানান, তারা সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমি ফলের ব্যবসা করেন। মৌসুমের শুরুতেই তারা বাড়ী বাড়ী ঘুরে অগ্রীম টাকা দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে মালিকদের কাছে গাছের ফল চুক্তি হিসেবে কিনে রাখেন। সময় হলে তথা পরিপক্ক হলে ওইসব ফল সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলাসহ রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করেন তারা। তারা মাসে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে কাঁচা ফল চালান পাঠাতে পারেন।

 


এসব ব্যবসায়ীদের দেয়া হিসেব মতে, বছরে ১২০ থেকে ১৪৪ বার কাঁচা ফল পাঠাতে পারেন তারা। প্রতি চালানে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা করে তাদের লাভ থাকে। এতে করে প্রতি পাইকারের প্রতি বছর ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা করে লাভ হয়। এ লাভের টাকাতেই তাদের সারা বছরের সংসার খরচ ও সন্তানদের শিক্ষা খরচ চলে।

 


মৌসুমি কাঁচা ফল ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, তিনি ৮ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। চলতি মৌসুমে তিনি ৬০ হাজার টাকায় ৫৫ টি জলপাই গাছ কিনেছেন। জলপাই বিক্রি চলবে ৪৫ থেকে ৬০ দিন। এই দেড়-দুই মাসে তার অন্তত ৫০ হাজার টাকা লাভ বলে বলে আশা করছেন।

 

তারা প্রথমে জলপাই গাছ থেকে সংগ্রহ করে ছোট ও বড় বাছাই করে তা বস্তাবন্ধি করেন। প্রতি বস্তায় ১২০ কেজি করে জলপাই ভরেন। ছোট সাইজের জলপাই প্রতি বস্তা এক হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা করে এবং বড় সাইজের জলপাই প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

 

মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, মৌসুমী ফলের ব্যবসার আয় দিয়েই জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। সে ১০ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। ফলের প্রতিটি মৌসুমে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টি চালান দিতে পারেন তিনি।

 

তিনি আরো জানান, প্রতি চালানে তাদের কেনা দামের ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মাল যায়। এগুলো বিক্রিতে যা দিয়ে কিনা হয়েছিলো, প্রায় তার সমান লাভ হয়। কিন্তু পরিবহণ ব্যয়, ফল সংগ্রহের শ্রমিক ও ফলের মালিকের খরচ বাদে প্রতি চালানে লাভ থাকে ১ হাজার ৫০০ টাকা থকে দুই হাজার টাকা করে।

 

জলপাই গাছের মালিক সুফিয়া বেগম জানান, তার দুটি গাছ মৌসুমের শুরুতে ৫,২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এই টাকাতেই তার দুই ছেলে-মেয়ের সারা বছরের খাতা, কলম কেনার খরচ হয়ে যাবে। প্রতি বছর তিনি জলপাই বিক্রির টাকায় ছেলে-মেয়ের খাতা, কলম কিনে দেওয়াসহ অন্যান্য কাজেও ব্যয় করতে পারেন।

 


জেলা কৃষি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিবানী রাণী বলেন, জেলার নকলা উপজেলার মাটি আম, জাম কাঠাঁল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, জলপাই, আমড়া, জাম্বুরা, তেঁতুল, বেল, আমলকী, কদবেল ও নারিকেলসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। কৃষি বিভাগ, ফল চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করছে।

 

ভোরের আকাশ/নি