logo
আপডেট : ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:৪৬
মৌলভীবাজারে আমনের বাম্পার ফলন, লক্ষ্যমাত্রার অধিক উৎপাদনের আশা
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারে আমনের বাম্পার ফলন, লক্ষ্যমাত্রার অধিক উৎপাদনের আশা

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকায় কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে।

মৌলভীবাজারে এবার অনুকূল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত মৌলভীবাজার জেলার চারপাশ। কেউ ধান কর্তন করছেন, আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে একই জমিতে রোপা আমন ধান রোপণের পর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কর্তন শুরু হয়েছে। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার অধিক উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, যান্ত্রিকনির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

 

প্রতিবছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। অনেকেই সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারেন না। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি হতাশায় থাকেন। রোপণ ও কর্তন যান্ত্রিক হওয়ায় কৃষকরা কম খরচে ভালো ফলন পাচ্ছেন।

 

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকায় পাতাকুঁড়ি এগ্রোর সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের আয়োজনে খামার যান্ত্রিকীকরণের আওতায় রোপা আমন ধানের চারা রোপণ ও কর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

 

এ লক্ষ্যে মাঠে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে এক আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কুমার দত্ত, স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীনসহ অন্যরা। উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি অফিসার নিরোজ কান্তি রায়, স্থানীয় কৃষক বাচ্চু মিয়া ও রাজু আহমদ।

 

পরে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে আমন ধান কর্তনের উদ্বোধন এবং যান্ত্রিকভাবে উৎপাদিত মাঠের ফসল কম্বাইন হারভেস্টার চালিয়ে কর্তন করেন। খামার যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোক্তা সৈয়দ উমেদ আলী জানান, এ বছর ১২৩ বিগা জমিতে হাইব্রিড ও ব্রি ৭৫ জাতের ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৮৩ বিঘা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপণ করেন এবং ওই জমিতে ধান কর্তন করছেন কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে। এ যন্ত্রে ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই একসাথে হয়ে যায়। যে কারণে শ্রমিক কম লাগে এবং খরচ কমে যায়।

 

তিনি বলেন, প্রতিবছরই শ্রমিক সংকট লেগে থাকে। তাই আমরা যন্ত্রের ওপর পরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।

 

স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন বলেন, যান্ত্রিকীকরণের কারণে খরচ কমে গেছে, জমিতে ফলন ভালো হচ্ছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে কমবয়সি চারা রোপণ করা যায়। এতে ফলনও ভালো হয়। আমরা যে জমিতে ধান কাটছি, সে জমিতেই মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করেছি। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কর্তন করছি, সেটি ব্যবহারে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, এ বছর বিভিন্ন জাতের ব্রি-ধান ও হাইব্রিড ধান কৃষকরা চাষাবাদ করেছেন। আমন ধান চাষে এ বছর অনুক‚ল পরিবেশ ও পোকার আক্রমণ কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতিবছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

এ বছর জেলায় আমন ধান চাষাবাদে জমির পরিমাণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৪শ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৬শ হেক্টর পরিমাণ জমি- যার সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টন। কৃষি বিভাগ আশা করছে, এ বছর ৩ লাখ টনের উপরে উৎপাদন হবে।

 

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এক ইঞ্চি জমিও যাতে খালি পড়ে না থাকে সে জন্য কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এতে করে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ জাগছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে শ্রম কমেছে, ব্যয় কমেছে, উৎপাদন বেড়েছে, কৃষকরা লাভমান হচ্ছেন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এখান থেকে মৌলভীবাজারের সব কৃষককে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি।

 

কৃষি বিভাগ জানায়, আমন ধান চাষে এ বছর অনুকূল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতিবছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি