logo
আপডেট : ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:৫৮
যেন হারিয়ে যাওয়া পা আবার ফিরে পেলাম
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

যেন হারিয়ে যাওয়া পা আবার ফিরে পেলাম

সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে হিমেল

এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কলেজছাত্র হিমেলের (১৮)। কিন্তু প্রায় ৮ মাস আগে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের রামদায়ের কোপে বাম পা হারান তিনি। এরপরই জীবনের সবকিছু বদলে যায় তার। দুঃসহ সেই স্মৃতিটা আজও টাটকা কিশোর হিমেলের কাছে।

 

সেদিন ছিল ২০২২ সালের ১৮ মে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তার এবং তার বাবা মোকাররম হোসেনের ওপর রামদা হাতে হামলা চালায় প্রতিবেশী জেনরাল নামক ব্যক্তি। বাঁচার জন্য বাবা-ছেলে দুজনে দৌড়ে পালাতে চেয়েছিলেন কিন্তু হোচট খেয়ে মাটিতে পরে যাওয়া বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে রামদার কোপে মারাত্মক জখম হয় তার বাম পা।

 

এরপর কেটে ফেলতে হয় সেই পা। এত দিন ক্রাচে ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল এই কলেজছাত্রের দুর্বিষহ জীবন। দেয়া হয়নি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড কেন্দ্রে (সিআরপি) তার কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়েছে। প্রায় ৮ মাস পর দুই পায়ে হাঁটতে পেরে হিমেলের মুখজুড়ে উপচে পড়ছিল হাসির ঝিলিক।

 

সেই হাসি নিয়ে বললেন, ‘যেন হারিয়ে যাওয়া পা আবার ফিরে পেলাম।’

হিমেলের জীবন বদলে দেয়ার পেছনে ছিল বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম অবদান। দীর্ঘদিন ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণের কারণে আর্থিকভাবে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল পরিবারটি। আর তখনই পরিবারটির পাশে দাঁড়ান প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

 

সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) উপস্থিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে পঙ্গু হিমেলের জন্য উপহার হিসেবে দেন একটি কৃত্রিম পা। এ সময় প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, হিমেলরা আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা।

 

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে ছেলেটির একটি পা হারাতে হয় খবরটি শোনার পর থেকেই আমি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তার খোঁজখবর রেখেছি। তরুণ একটি ছেলে যে কি না এখনো কলেজের গন্ডি পেরুতে পারেনি তার এমন ক্ষতি সত্যিই মেনে নেয়া কষ্টকর। দীর্ঘ চিকিৎসার পর আজকে ছেলেটির জন্য একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করেছি।

 

জন প্রতিনিধি হিসেবে কিংবা সমাজের একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি হিসেবে। এ ধরনের সহযোগিতা এবারই প্রথম নয়। সমাজের সবারই উচিত এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো। আর এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে সিআরপি।

 

প্রতিদিন এ ধরনের প্রায় হাজার খানেক মানুষ এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা-পরবর্তী সেবা গ্রহণের জন্য আসছে এটি সত্যিই দারুণ প্রশংসনীয়। আমি চাইব সিআরপির এই ধরনের কাজের ব্যাপ্তি আরো বিশালভাবে দেশের অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পরুক এবং এর জন্য আমাদের সবারই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসা উচিত।

 

এ বিষয়ে হিমেলের বড় বোন পিংকি খাতুন বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রথম থেকেই মন্ত্রী মহোদয় আমার ভাই এবং আমার পরিবারের পাশে সার্বক্ষণিক একজন অভিভাবকের মতো দাঁড়িয়েছেন। আজ আমার ভাইটি উনার দেয়া উপহার কৃত্রিম পায়ে ভর করে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং হেঁটে বেরাচ্ছে। এর চেয়ে আনন্দ আর কিছুই হতে পারে না।

 

উনার কাছে আমি এবং আমার পুরো পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি সিআরপিকেও অনেক ধন্যবাদ তাদের ট্রিটমেন্টে আমার ভাই এখন নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে।

 

ভোরের আকাশ/নি