গণসমাবেশের স্থান নয়াপল্টনের ব্যাপারে বিএনপি অনড় থাকলে ১০ তারিখের আগেই সেটি নিয়ন্ত্রণে নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময়ের মধ্যে গণসমাবেশের স্থান পরিবর্তন না হলে নয়াপল্টনসহ আশপাশের পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হচ্ছে। ডিএমপির সবগুলো ইউনিট ডিবি, সোয়াট, কাউন্টার টেররিজম প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। পাশাপাশি র্যাবও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, মাঠ ছাড়া রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না বিএনপি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশের আয়োজন ও বিএনপির পক্ষ থেকে অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাঠ ছাড়া রাস্তাঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাদে অন্য কোনো স্থানের নাম প্রস্তাব এখনো করেনি বিএনপি।
ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগামীকাল বুধবার (৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। এরই মধ্যে বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত না বদলালে অর্থাৎ অনুমোদিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা না দিলে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে। অর্থাৎ পল্টনে কোনোভাবেই সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। পুলিশের অনুমতির বাইরে সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, বেআইনি সমাবেশ বা জমায়েত হতে দেবে না পুলিশ। এ ক্ষেত্রে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই নয়াপল্টনের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া শুরু হবে। পুরো নয়াপল্টনসহ আশপাশের পুরো এলাকা নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কর্ডন করে ফেলা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে ডিএমপি।
ডিএমপির রিজার্ভ ফোর্সের সঙ্গে সোয়াট, সিটিটিসি এমনকি র্যাবও থাকবে নয়াপল্টনজুড়ে। কোনো জমায়েত সেখানে হতে দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশের কাজে বাধা দিতে কেউ এলে পুলিশ পুরোপুরি অ্যাকশনে যাবে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, বিএনপিকে কিছু শর্ত দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেটাই সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। সেই অনুপাতে আমাদের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। তবে যদি এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটানো হয় বা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা রোধে পুলিশ সতর্ক থাকবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। রাজধানীজুড়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি ডিভিশনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি থানাকে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে কোনো বিশৃঙ্খলা কঠোর হস্তে দমন করবে পুলিশ। তিনি বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যে কোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারি ও বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। র্যাব সাধারণত জঙ্গি দমন, মাদক কারবারি, অস্ত্রধারী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে আস্থা অর্জন করেছে।
তিনি আরো বলেন, রাজধানী ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিদেশি স্থাপনা ও অ্যাম্বাসি রয়েছে। ঢাকা শহরের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। শুধু এই জনসমাবেশ ঘিরে নয়, আমরা সবসময় জননিরাপত্তা, দেশীয় ভাবমূর্তি রক্ষা, বিদেশিদের কাছে যেন দেশীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে সচেষ্ট রয়েছি।
যে কোনো উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।
বিএনপির জনসমাবেশ ঘিরে র্যাবের পক্ষ থেকে রুটিন পেট্রোল থাকবে, চেকপোস্ট থাকবে, সাইবার ওয়ার্ল্ডে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। যাতে কোনো ধরনের উসকানিমূলক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নাশকতার চেষ্টা না হয়, সে জন্য র্যাবের সদস্যরা সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন।
এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরের মতো নাশকতার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। তাই যে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোপূর্বে দায়েরকৃত নাশকতা ও বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি ও পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া মাদক, দÐপ্রাপ্ত, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চোর, ছিনতাইকারীসহ নানা অপরাধে জড়িতরাও রয়েছে।
গত ২৯ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আগামী ১৫ দিন সারা দেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই নির্দেশ মোতাবেক রাজধানীসহ সারা দেশেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। প্রথম দিনের অভিযানে রাজধানীতে ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার ২৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ রয়েছে। সেখানে অনেক পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। কোনো অসাধু চক্র কোনো ধরনের সমস্যা যেন না করতে না পারে, সে জন্য আমরা কাজ করছি। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে কিনা, সে বিষয়েও আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সমাবেশের আগে সমাবেশস্থলে এসে বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়ো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে রকম কিছু করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করলে সে কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। আমরা সেভাবেই বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছি। তারপরও কেউ যদি নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, আমরা তাকে ছাড় দেব না। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ভোরের আকাশ/নি