logo
আপডেট : ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:৫৮
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত
সিলেটে দেড় সহস্রাধিক প্রাইমারি স্কুলে নেই খেলার মাঠ
এমএ মতিন, সিলেট

সিলেটে দেড় সহস্রাধিক প্রাইমারি স্কুলে নেই খেলার মাঠ

এমএ মতিন, সিলেট: খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। খেলার মাঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেলাধুলা ছাড়াও সমাবেশ আয়োজন ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে পাঠদানের জন্য প্রয়োজন হয় একটি সুন্দর মাঠের।

 

যদিও সিলেট অঞ্চলের ১ হাজার ৮৫৫টি প্রাইমারি স্কুলে খেলার মাঠ নেই। এ ছাড়া সারা দেশে খেলার মাঠ না থাকা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজারের বেশি। এতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।

 

শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের অভিমত, খেলার মাঠ ব্যতিত একটি বিদ্যালয় কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে পারে না। তাই খেলার মাঠ ছাড়া কোনো বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সমীচীন নয়। আর যেসব অনুমোদিত বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় খেলার মাঠ স্থাপন করা প্রয়োজন।

 

জানা গেছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার নানা দিক নিয়ে প্রতি বছর ‘অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংখ্যা, শ্রেণিকক্ষ, স্যানিটেশন, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন সেবা ও সুযোগ-সুবিধার তথ্যাদি তুলে ধরা হয়।

 

২০২১ শিক্ষাবর্ষের তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এর মধ্যে খেলার মাঠ রয়েছে ৫৪ হাজার ৮২৬টিতে। সেই হিসাবে দেশের ১০ হাজার ৭৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই।

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের মধ্যে খেলার মাঠের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে সিলেট অঞ্চলের প্রাইমারি স্কুলগুলো। সিলেট বিভাগের মোট ৫ হাজার ৫৮টি প্রাইমারি স্কুলের মধ্যে খেলার মাঠ আছে ৩ হাজার ২০৩টির। এ অঞ্চলে খেলার মাঠ না থাকা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৮৫৫।

 

সে হিসাবে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রাইমারি স্কুলের খেলার মাঠ নেই। ফলে এসব স্কুলে পড়াশোনা করলেও খেলাধুলায় পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার ১২টি উপজেলার একাধিক পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোতে এ সমস্যা বেশি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। সিলেট জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৭টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় আছে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে। সিলেট নগরীসহ সদর উপজেলায় রয়েছে ১২৫টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল। এর মধ্যে সিলেট নগরীতে পড়েছে ৫৩টি।

 

সিলেট সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল জলিল তালুকদার বলেন, নগরীর ৭০ ভাগ বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। এর মধ্যে দরগাহ জালালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধু শহীদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দর্শনদেউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিশোরী মোহন বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ স্কুলেই খেলার মাঠ নেই।

 

এমন চিত্র শুধু সিলেট নগরী কিংবা সিলেট জেলার গুটিকয়েক উপজেলার নয়। এ অবস্থা বিভাগের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায়ও বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের মহানগর, জেলা ও উপজেলা সদর এবং পৌর এলাকার প্রাইমারি স্কুলগুলোতে খেলার মাঠ না থাকার পরিমাণ বেশি।

 

এ ব্যাপারে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের তুলনায় শ্রেণিকক্ষের বাইরের শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। খেলতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, সামাজিকীকরণ হয়। তাই বিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন অবশ্যই মাঠের বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, নগর ও পৌর শহর এলাকায় সাধারণত দানকৃত জমিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো গড়ে তোলা হয়েছিল। শহরাঞ্চলে জমির দাম বেশি হওয়ায় দানকৃত জমির পরিমাণ অনেক কম। তাই অনেক ক্ষেত্রে সেখানে শুধু একাডেমিক ভবন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

 

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর ‘অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস’ প্রতিবেদনের জন্য আমরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে তথ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করি। আমি সিলেটে যোগদানের পূর্বেই এ সংক্রান্ত তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, স্কুলের সঙ্গে খেলার মাঠ শুধু দরকার বললে হবে না, অবশ্য থাকা উচিত বলতে হবে। আর প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলার গুরুত্ব কোনোভাবে কম নয়। একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করার সময় খেলার মাঠ সংযুক্ত করেই তৈরি করা উচিত।

 

ভোরের আকাশ/নি