logo
আপডেট : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১২:৪৪
শিশু-নবজাতকদের বাঁচাতে চেষ্টার কমতি নেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে : মমেক পরিচালক
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

শিশু-নবজাতকদের বাঁচাতে চেষ্টার কমতি নেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে : মমেক পরিচালক

শীতের শুরু থেকেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) শিশু ও নবজাতক ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুও হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা সবাইকে সুস্থ রাখতে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন।

 

পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম কিবরিয়া।

 

তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সেবা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবু চিকিৎসক ও নার্সরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো শিশুকেই আমরা সেবা না দিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি না। আমাদের ওপর সাধারণ মানুষের একটা আস্থা রয়েছে। তাই ময়মনসিংহের ছয়টি ছাড়াও অন্তত ১০ জেলার মানুষ এই হাসপাতালে সেবা নেন।

 

পরিচালক আরো বলেন, অভিভাবকদের কাছে পরামর্শ থাকবে, যেহেতু শীত পড়েছে সেহেতু বাচ্চাদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। শিশুদের সব সময় হাতমোজা ও পামোজা পরিয়ে রাখতে হবে। ছোট বাচ্চাদের সবসময় মায়েদের কাছাকাছি রাখতে হবে, যাতে মায়ের শরীরের তাপ শিশুর শরীরে লাগে। এটি শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঠান্ডাজনিত সমস্যা, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৫৫ শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশু মারা গেছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছে মোট ৪৫০ শিশু।

 

অন্যদিকে, ৬০ বেডের স্থলে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ শিশু ও নবজাতক। মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

 

কেউ কেউ এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করছে। তবে ঠান্ডাজনিত সমস্যা, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আতঙ্কিত না হয়ে শিশুদের সার্বক্ষণিক শীতের পোশাক পরিয়ে রাখতে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

 

জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার মারুফা আক্তার তার দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের ৩০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডের সিট ও মেঝে খালি নেই। আমি নিজেই বারান্দায় একটু ঠাঁই পেয়েছি। সেখানে দিনরাত কাটাচ্ছি। রাতে ঠান্ডা বাতাসে একটু কষ্ট হয়। তবে এখানকার চিকিৎসকরা খুব আন্তরিকভাবে সেবা দিচ্ছেন।’

 

শুক্রবার রাতে ছয় মাস বয়সি শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার বাসিন্দা অর্চনা রানী। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে আমার বাচ্চার পাতলা পায়খানা শুরু হলে স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়ে দুদিন চিকিৎসা নিই। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। পরে মমেক হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসক ও নার্সদের সেবায় আমার বাচ্চা এখন মোটামুটি সুস্থ। তবে কবে নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাব, তা এখন বলতে পারছি না।’

 

এ বিষয়ে শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, শীতজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের ৬০ বেডে ভর্তি আছে প্রায় ৪৫০ রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১৫৫ শিশু। শিশুদের বেশির ভাগ ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

 

ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝে এবং বারান্দায় সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকা সত্তে¡ও সাধ্য অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি