চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় সরকারি খাদ্য বিভাগের আহব্বানে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে সাড়া নেই কৃষকদের।
স্থানীয় বাজারের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে ব্যবধান থাকায় কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছে না। ধান বিক্রিতে স্থানীয়বাজারে দাম বেশি ও ঝামেলা মুক্ত। অপরদিকে সরকারি গোডাউনে ধানের দাম কম ও বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয় কৃষকদের। এসব ঝামেলা এড়াতে ও দাম বেশি পাওয়ায় তারা স্থানীয়বাজারেই ধান বিক্রি করছে।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১২০ টাকা দরে উপজেলায় ১ হাজার ৫৮ টন রোপা আমন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধান কিনতে সক্ষম হয়নি উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর।
জানা যায়, এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো তৎপরতা। ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি ও কৃষকদের অসহযোগিতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে আমন ধান ক্রয়ের কোনো কার্ড প্রদান করা হয়নি। গত ২০১৪ সালে কৃষকদের ভর্তুকি কার্ডের মাধ্যমে উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হতো। বিগত দিনে ধান চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহ হওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার জন্য কৃষকদের তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান করা হতো।
সরেজমিনে উপজেলার বেলগাছি, ডাউকি, কুমারী, হারদি, কালিদাসপুর, নাগদাহ, আইলহাস, খাদেমপুর, গাংনী, চিৎলা, ভাংবাড়িয়া, জেহালা ইউনিয়নসহ পৌর শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ (৪০ কেজি) আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১০৮০ থেকে ১২৫০ টাকায়।
হাটবাজারগুলোতে সহজেই ধান বিক্রি করতে পারছে কৃষকরা। তাই লাভ-ক্ষতির হিসাব না করেই বিভিন্ন দৌড়ঝাঁপ ও নিয়মকানুন এড়াতেই কৃষকরা স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে ধান বিক্রি করছেন।
উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক আবুল হোসেন জানান, গত ২ বছর আগে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করেছিলাম। তাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ থাকে। সে বছর আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এ বছর ধান নেয়ার জন্য আমার সঙ্গে কেউই যোগাযোগ করেনি। এ বছর আমি প্রতি মণ আমন ধান ১১৮০ টাকা দরে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করেছি।
উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের লক্ষীপুর গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক সবুজ আহমেদ জানান, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে বেশি শুকানো লাগে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ব্যাংক থেকে টাকা আনতে হয়। এসব ঝামেলা এড়াতে আমি নগদ টাকায় স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করেছি।
আলমডাঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) ইন্সপেক্টর লিটন দাস ভোরের আকাশকে জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ধানে ১৪% আর্দ্রতা, ০.৫% বিজাতীয় পদার্থ, ৮% ভিন্ন জাতের ধানের মিশ্রণ, ২% অপুষ্ট ও বিনষ্ট দানা এবং ০.৫% চিটা থাকতে পারবে।
তাই কৃষকরা এত নিয়ম মেনে ধান বিক্রিতে আগ্রহী থাকেন না। আমি মাইকিং করেছি। কোনো দালালের সঙ্গে নয়, কৃষকদের সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে বলেছি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মাদ আব্দুল হামিদ ভোরের আকাশকে জানান, চলতি বছর কৃষকরা বাজারে ধান বিক্রি করে আমাদের চেয়ে বেশি মূল্য পাচ্ছেন। তাই কৃষকরা আমাদের গুদামমুখী হচ্ছেন না।
আলমডাঙ্গা উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) রনি আলম নুর জানান, কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি