logo
আপডেট : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৭:২৭
জয়পুরহাটে ফুলকপি চাষে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
জয়পুরহাট প্রতিনিধি

জয়পুরহাটে ফুলকপি চাষে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

ফুলকপি ক্ষেতে ব্যস্ত নুর ইসলাম

শীতের চলতি মৌসুমে ফুলকপি চাষে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। ধান-গম চাষ করে তেমন ভালো লাভবান না হলেও ফুলকপি চাষে লাভ হয় দ্বিগুণ থেকে দশগুণ।

 

এ সবজি চাষ করে কখনো লোকসান গুনতে হয় না। আরো মজার বিষয় হলো এই সবজি চাষে পরিশ্রম, পুঁজি এবং সময় কম লাগে। অল্প দিনের মধ্যেই ফসল তোলা সম্ভব হয়। তাই ৩৭ বছর ধরে টানা ফুলকপি চাষ করছেন নুর ইসলাম।

 

এখনো এই সবজি চাষের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। প্রতিবছরই কমপক্ষে এক বিঘা থেকে দের বিঘা জমিতে নিয়মিত ফুলকপি চাষ করছেন তিনি। বলা হচ্ছে, জয়পুরহাট সদরের আদর্শপাড়া মহল্লার কৃষক নুর ইসলামের কথা।

 

সফল ফুলকপি চাষি নুর ইসলাম জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে এ এলাকায় প্রথম ফুলকপি চাষ শুরু করেন, সদরের রহমতপুর মহল্লার মনছের আলী। দুই বছরের মধ্যেই তার সাফল্য গাথা, পরস্পরের মুখে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অল্প পুঁজি খাটিয়ে সে সময় তিনি ভালো লাভবান হোন।

 

তার কাছ থেকে সব শুনে ৩৭ বছর আগে তিনিও এ সবজি চাষে অনুপ্রাণিত হন। সে বছরই এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেন। লাভ হয় খরচের থেকে ৫-৬ গুণ বেশি। তারপর থেকে নিয়মিত এক থেকে দেড় বিঘা জমিতে এ সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। আর কোনো বছর এ সবজি চাষ বাদও দেননি।

 

তিনি আরো জানান, তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এ এলাকার অনেকেই এখন ফুলকপি চাষ শুরু করেছেন। দিন দিন বাড়ছে এ সবজির চাষ। এতে তাদের সুবিধাও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে পাইকারিতে ফুলকপি কিনেন। তারপর সেগুলো ট্রাকযোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করেন।

 

জয়পুরহাট পৌরসভার দেওয়ানপাড়া মহল্লার মুকুল হোসেন এবং আদর্শপাড়া মহল্লার মজনু মিয়া জানান, আগে তারা তাদের জমিতে দীর্ঘমেয়াদি অন্যান্য ফসল চাষ করতেন। তাতে সময় শ্রম এবং পুঁজি বেশি লাগত। কখনো লাভ হতো। কখনো গুনতে হতো লোকসান।

 

ওইসব জমিতে এখন নুরুল ইসলামের দেখাদেখি ফুলকপি চাষ করছেন তারা। এতে সময়, খরচ ও পরিশ্রম কম লাগছে। কিন্তু লাভ থাকতে কমপক্ষে দ্বিগুণ। কখনো কখনো খরচের দশগুণ লাভবান হয়েছেন তারা।

 

নুর ইসলাম জানান, তিনি এবার কার্তিক মাসের শুরুতে এক বিঘা জমিতে মাউন্টেন এবং ব্রকলি জাতের ফুলকপি চাষ করেছেন। আর এক মাসের মধ্যেই ফসল তুলতে পারবেন তিনি। এ এক বিঘা জমিতে তার সব মিলে খরচ হবে ১০ হাজার টাকা। ফসল বিক্রি করবেন ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায়। তার আশা খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ থাকবে ৩০-৯০ হাজার টাকা।

 

ফুলকপি চাষের বিষয়ে নুর ইসলাম জানান, এর চাষ পদ্ধতি খুব সহজ। এজন্য প্রতি বিঘা জমিতে চাষের আগে গোবর সার ৫০ কেজি, টিএসপি ৩০ কেজি, এমওপি ৩০ কেজি এবং ইউরিয়া ১০ কেজি ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর জমিটি কলের মেশিন দিয়ে চারটি চাষ করতে হয়। এতে মাটি ঝুরঝুরে হবে।

 

এ মাটিতেই ২০ ইঞ্চি পর পর একটি করে কপির চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর পরপরই চারার গোড়ায় সামান্য পানি দিতে হবে। চারা লাগানোর ১৫ দিন পরে কোদাল দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আর ২০-২৫ দিন পরে চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে বাঁধাই করে দিতে হবে। বাঁধাই দেয়ার দু-তিন দিন পরে হালকা করে সেচ দিতে হবে। ৫০ দিন বয়সে চারায় ফুল দেখা দিবে। ৬০ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যাবে।

 

জয়পুরহাট মাছ বাজারের বিক্রেতা মিজানুর রহমান জানান, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ পিচ ফুলকপি বিক্রি করে। প্রতিটি ফুলকপির ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা। এতে মোট ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা বিক্রি হয়।

 

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল রানা জানান, জেলায় এ বছর সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ২ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (পিপি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের কোন কোন ফসলের উপর প্রণোদনা দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত সেন্ট্রালভাবে নেয়া হয়। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকি।

 

ভোরের আকাশ/নি