logo
আপডেট : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ২০:২৭
রিজভী-আমানসহ আটক শতাধিক
নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশত
নিজস্ব প্রতিবেদক

নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশত

রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও পুলিশ, সাংবাদিক এবং বিএনপিকর্মীসহ প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরের পর থেকে নয়াপল্টন রয়েছে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। আটক করা হয়েছে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ দলটির শতাধিক নেতাকর্মীকে।

 

ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাস্তায় সমাবেশের অনুমতি না দিলেও বিএনপি কর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থানের চেষ্টা করছিল। তাতে বাধা দিলে দলটির কর্মীরা বিভিন্ন অলিগলি থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় আত্মরক্ষায় পুলিশ টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় বিএনপি কর্মীদের। আর এ ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পার্টি অফিসে অভিযান চালানো নজিরবিহীন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনা চলে আসছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলেও বিএনপি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশের ব্যাপারে অনড় ছিল। এমন অবস্থায় বুধবার সকাল থেকেই উত্তেজনা চলে আসছিল। সকাল থেকে দলটির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান নেন। বেলা ১১টার দিকে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান নয়াপল্টনের সমাবেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি নয়াপল্টনের সামনের সড়কটি খুলে দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করতে থাকে। এমন অবস্থায় দুপুর ২টার পর অতিরিক্ত পুলিশ এসে সতর্কাবস্থা গ্রহণ করে। একপর্যায়ে বিএনপি কর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ করে নানা উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়। একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এমন অবস্থায় পুলিশ অ্যাকশনে যায়। মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। পাশাপাশি এপিসি থেকেও নিক্ষেপ করা হয় রাবার বুলেট। প্রায় ১০ মিনিট এভাবে চলার পর বিএনপি কর্মীরা তাদের কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়ে। এ সময় পুলিশের আরো সদস্য, সোয়াটের সদস্য ও ডিবি সদস্যরা পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বিএনপি কর্মীরা অলিগলি থেকেই ককটেল ও বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও গলির ভেতরে ঢুকে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল চার্জ করে। আর এভাবেই চলতে থাকে পুলিশ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ।

 

নয়াপল্টন থেকে অসংখ্য বোমা উদ্ধার : রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি।

 

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সেফটি ও সিকিউরিটিকে যারা নষ্ট করতে চায়, তাদের কোনোভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ ছাড় দেবে না। এরই অংশ হিসেবে আমরা যখন দেখলাম, জনগণের জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ কার্যক্রম হচ্ছে নয়াপল্টন এলাকায় এবং পুলিশের ওপর হামলা ও বোমা নিক্ষেপ হয়েছে, তখন আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।

 

তিনি বলেন, অভিযানে নয়াপল্টন থেকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছি। অসংখ্য সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়া অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

 

অফিসের সামনে রাস্তায় ফখরুল : এদিকে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন। তিনি অফিসের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তিনি পুলিশি বাধায় পারেননি। তার অভিযোগ, নজিরবিহীনভাবে পুলিশ বিএনপি অফিসে ঢুকে অভিযান চালিয়েছে। পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে। আটক করা হয়েছে নেতাকর্মীদের। নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রচার গাড়ি। বর্তমান সরকারের কাছে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

 

সংঘর্ষে নিহত ১ আহত অর্ধশত : পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের নাম মকবুল হোসেন (৪০)। তবে সে বিএনপি কর্মী বা নেতা কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আহতরা হলেনÑ বোরহান উদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের কর্মী আনোয়ার ইকবাল, পল্টন থানা যুবদলের কর্মী মো. খোকন, মো. মনির হোসেন, মো. রাশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্্দীন হলের ছাত্রদল নেতা মো. ইয়াসির আরাফাত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতা মো. সুমন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা মো. জহির হাসান, রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. শামীম, কদমতলী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. হানিফ, মো. হৃদয় ও মো. মকবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফারহান আরিফ, শাহবাগ থানা যুবদল নেতা মো. নূরনবী, মনির, শাহ আলী থানা যুবদলের নেতা মো. সুলতান আহমেদ, শেরেবাংলা নগর যুবদলের নেতা মো. আমিনুল ইসলাম, গুলশান থানা ছাত্রদলের নেতা আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের বিপ্লব হাওলাদার, মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা মো. মেহেদী হাসান নয়ন । ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন খান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। এ ছাড়া অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন।

 

ডিএমপির মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, এখনো বিএনপির সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু তারা (বিএনপি কর্মীরা) রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। বারবার অনুরোধ করার পরও তারা কথা শোনেননি। পুলিশ তাদের তুলে দিতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিএনপি কর্মীরা পুলিশ সদস্যদের ওপর বৃষ্টির মতো ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে।

 

তিনি বলেন, গত দুদিন ধরে তাদের বলা হচ্ছে রাস্তা ছেড়ে দিতে। যেহেতু তাদের এখানে সমাবেশের অনুমতি নেই সেহেতু আমরা ধৈর্য সহকারে বারবার বলেছি কিন্তু তারা শোনেনি।

 

আটকের আগে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেছেন, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। পুলিশ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, আমরা তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সমাবেশের স্থান নিয়ে প্রশাসন ও আমাদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।

 

এদিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকার বলেন, জনগণের নিরাপত্তা দেয়াই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রহণ করবে।

 

যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটতে পারে তার জন্য ডিএমপি কর্তৃপক্ষের যা যা করণীয়, তাই তাই করছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে।

 

রিজভী,আমানসহ আটক শতাধিক : দুপুরের পর থেকে পুলিশ নয়াপল্টনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ অন্তত একশজন গ্রেপ্তার হয়েছে।

 

সরেজমিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে দেখা যায়, পুলিশ কাকরাইল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে বিজয়নগর সড়ক, পল্টন থানার মোড় থেকে শুরু করে দৈনিক বাংলা সড়ক পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রয়েছে। পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি, জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দাঙ্গা দমন পুলিশের পাশাপাশি সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজমের সদস্যরাও মোতায়েন রয়েছে।

 

এদিকে, আজ বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি। যেখানে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন বিএনপি মহাসচিব।

 

ভোরের আকাশ/আসা