নজিরবিহীন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে রাজধানী। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে মূল সড়ক পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা। বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিতব্য জনসভার স্থান ঘিরে থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা।
পুলিশ-র্যাবের অন্তত ২০ হাজার সদস্য কাজ করবেন। জনসভাস্থল থেকে যেন কোনোভাবেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে বিএনপি কর্মীরা অবস্থান নিতে না পারে সেজন্যই পৃথক নিরাপত্তার ছক এঁকেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ছাড়াও রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে বসানো চেকপোস্টে ব্যাপকভাবে তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাস্তায় টহল দিচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের নাশকতা সহ্য করবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুরু থেকে যে কঠোর অবস্থান, সেটিই বলবৎ থাকবে। পুরো রাজধানীজুড়েই কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। জানা যায়, বিএনপির সমাবেশস্থল গোলাপবাগ মাঠকেন্দ্রিক পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা থাকবে।
র্যাব-পুলিশের অন্তত ২০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা টিম কাজ করবে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা জনসভাস্থলসহ আশপাশের এলাকাকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি। বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটও মাঠে থাকবে।
জানা গেছে, রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের একাধিক টিম রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালাচ্ছে। আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, গুলিস্তান ও বাবুবাজারসহ বিভিন্ন স্থানেও পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়েছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস থামিয়ে ভেতরে তল্লাশি করা হচ্ছে এসব স্থানে। কোনো যাত্রীর সঙ্গে ব্যাগ থাকলে সেটিও যাচাই করা হচ্ছে।
ঢাকার অলিগলি, মোড়ে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সন্দেহভাজনদের গতিরোধ করে তল্লাশি করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহনেও তল্লাশি চলছে। মোটরসাইকেল চালকদের পরিচয় জেনে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে ঢাকায়।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা এবং অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও রয়েছে র্যাব-পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টঙ্গী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের টঙ্গী সেতু দিয়ে যারা ঢাকায় আসছেন, তাদেরসহ পরিবহনগুলোয় ব্যাপক তল্লাশি চালানো হচ্ছে। উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে সেতুর মুখে রয়েছে চেকপোস্ট।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় রাখা হয়েছে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নয়াপল্টনের নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের সবকটি গলিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি। পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। নয়াপল্টনের চারপাশ ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তার কথা জানিয়েছেন ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, দৈনিক বাংলা মোড় সড়ক থেকে শুরু করে পুরো পল্টন এলাকায় কয়েকস্তরের নিরাপত্তা থাকবে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে এ এলাকায়। সব ধরনের সিকিউরিটি থ্রেড বিবেচনা করে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, পুরো রাজধানীকে একটি নিরাপত্তা সার্কিটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
পোশাকে-সাদা পোশাকে ব্যাপক নজরদারি চলছে-চলবে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে যাতে অন্য কোনো গোষ্ঠী সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য পুলিশের প্রতিটি থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও সাইবার ইউনিট সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেটিও নজরে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, সোয়াট টিম প্রস্তুত আছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, রাজধানীতে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি কেউ করতে না পারে, সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, শনিবার দিনটিকে ঘিরে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারী ও সুযোগসন্ধানীদের বিশৃঙ্খলা-নাশকতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির তৎপরতা রোধে তাদের গোয়েন্দা নজরদারি ও নিয়মিত টহল কার্যক্রম চলমান। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স টিম, ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে সাইবার জগতে যাতে কেউ কোনো গুজব বা অপপ্রচার ছড়াতে না পারে সেজন্য র্যাবের সাইবার ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুত, তাদের কাজও চলমান।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র্যাব ফোর্সেস। যে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা, নাশকতা রোধ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত টহল কার্যক্রম জোরদার রয়েছে।
যে কোনো ধরনের হামলা ও নাশকতা রোধে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্থান ও প্রবেশপথসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাবের চেকপোস্টে নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা চালু রেখেছে ডিএমপি। রাজধানীর ৫০টি থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ সার্বক্ষণিক নজরদারি ও অভিযান চালু রেখেছে।
বিশেষ এ অভিযান ও চেকপোস্ট সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ডিসেম্বর মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও বড়দিনসহ একাধিক জাতীয় কর্মসূচি রয়েছে। এ কারণে গত ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিশেষ অভিযান ও চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি