logo
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:০০
বেকারি কারখানায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার
মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর

বেকারি কারখানায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার

শরীয়তপুর জেলা সদরের একটি বেকারি কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার। ছবিটি শুক্রবার তোলা

মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর: শরীয়তপুর জেলা সদরসহ ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে বেকারি কারখানা। এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে খাবার।

 

কারখানাগুলোতে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে কেক, বাটারবন, পাউরুটি, বিস্কুট, বনরুটি, সেমাই, শিশুখাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি-ফাস্টফুড খাবার উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খাদ্যের মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ শ্রমিক বা বেকারির মালিকরাই প্যাকেটের গায়ে লিখে দেন।

 

এসব কারখানার অধিকাংশের নেই কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। উৎপাদিত খাবারে দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ-টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদনসহ নেই উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ।

 

শরীয়তপুর জেলা সদরের রাজগঞ্জ ব্রিজের ৫শ’ গজ পশ্চিম পাশে রাস্তার মোড়ে তিনটি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনের পশ্চিম পাশে দুটি, নিকারীপাড়ায় তিনটিসহ বিভিন্নœ বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে বেকারি কারখানা। এ ছাড়া জাজিরা উপজেলা সদর, কাজীরহাট, জাজিরা পুরান বাজার, বড়কান্দি, পালের চর, বিলাশপুর, কুন্ডেরচর, নড়িয়া উপজেলা সদর, ভোজেশ^র, ডগ্রি বাজার, ঘড়িসার, পÐিতসার, চাকধ, সুরেশ^র, গোলারবাজার, আহমদ নগর, ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদর, রামভদ্রপুর, কার্তিকপুর, সাজনপুর, সখিপুর, মোল্লার হাট, ডিএম খালী, চরভাগা, গোসাইরহাট উপজেলা সদর, দাসেরজঙ্গল বাজার, কোদালপুর, গরিবের চর বাজার, হাঁটুরিয়া, নাগেরপাড়া, সামন্তসার, ডামুড্যা উপজেলা সদর, ডামুড্যা বাজার, দারুল আমান, কনেশ^র, ধানকাঠিসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে, বাসাবাড়িতে, হাট-বাজারে প্রায় দুই শতাধিক বেকারি কারখানা গড়ে উঠেছে।

 

এসব কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যের মান প্রণয়ন এবং গুণগতমান ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণ কোনো ব্যবস্থা নেই। কারখানাগুলো নিয়মনীতি না মেনে স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করছে বেকারি খাবার। অভিযোগ রয়েছে বেকারি খাবার তৈরি করতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, কেমিক্যাল ও নিন্ম মানের পাম তেল ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

শ্রমিকরা বিশেষ পোশাক ছাড়া খালি পায়ে খাবার তৈরি করছেন। নোংরা ও অপরিষ্কার কড়াইগুলোতে আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। ডালডা দিয়ে তৈরি করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। অধিকাংশ বেকারি মালিকের বিরুদ্ধে বিকল্প বেকারি মোড়কে নিন্ম মানের খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পণ্য বাজারজাত করার অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে চায়ের দোকানগুলোতে একাধিক পলি প্যাকে ঝুলছে পাউরুটি, ক্রিমরোল, কেক, পেটিস, সিঙারাসহ অন্যান্য বেকারি খাবার।

 

মোড়কের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা থাকলেও কত তারিখে উৎপাদন হয়েছে বা মেয়াদ কবে শেষ হবে তার কোনো উল্লেখ নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। নড়িয়া উপজেলার কাঠহুগলী ব্রিজ সংলগ্ন মেসার্স সরদার বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারিতে গিয়ে দেখা গেছে, বেকারির মালিক নিজাম সরদার নিজেই খাদ্যের উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লিখে দিচ্ছেন। তার বেকারির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।

 

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাঝে মধ্যে স্যানিটারি কর্মকর্তা এসে ঘুরে চলে যায়। উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় নেই। ক্রেতারা তো আর এসব জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু এত নি¤œমানের খাবার তৈরি করা হলে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেক নজরে নিচ্ছে না।

 

শরীয়তপুর জেলা স্যানিটারি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, অবৈধ বেকারি কারখানার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে।

 

ভোরের আকাশ/নি