নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় দেশের ৫ গুণী নারীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার, সংস্কৃতি, শিক্ষা, আইন ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার জন্য তাদের এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
গুণী এ নারীরা হলেন- অধ্যাপক অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগম, লাকী ইনাম, ফরিদা ইয়াসমিন, অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম এবং অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী। গতকাল রোববার দৈনিক ভোরের আকাশের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের সংবর্ধনা প্রদান করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগম, লাকী ইনাম ও ফরিদা ইয়াসমিনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি এবং দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। এছাড়া বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহ-সভাপতি শেখ জাহাঙ্গীর আলম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি রোকেয়া প্রাচী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অভিনেত্রী তারিন জাহান, দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক টুলু বিশ^াস প্রমুখ।
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, জ¦ালাও-পোড়াও, মানুষকে পুড়িয়ে মারাসহ গণবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে বিএনপি জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হবে এবং অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
তিনি বলেন, বিএনপি ও তার সহযোগীরা অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় যেতে চায় এবং দেশে অসাংবিধানিক সরকার দেখতে চায়। আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী কুখ্যাত রাজাকারদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজুর রহমানকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। আর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও দেশের পতাকার অসম্মান করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য, বাংলাদেশের কথা বললে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে হয়। অথচ বিএনপি বাংলাদেশ থেকে স্বাধীনতার চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চায়।
তিনি বলেন, রাজশাহীর এক জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেক কুখ্যাত রাজাকার স্বাধীনতার বিরোধিতা করেনি বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর একাত্তরের বিজয় ধ্বংস করার জন্য যে গোলাম আযম পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি করেছিল তাকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে উল্টে দেয়ার প্রক্রিয়ায় কুশীলবই শুধু নন, নাটের গুরুও জিয়াউর রহমান। তার তৈরি করা দল ও তার জোটের কাছ থেকে বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের লম্পঝম্প দেখতে হচ্ছে।
রেজাউল করিম বলেন, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করতে পেট্রলবোমা হামলা, মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। আন্দোলনের নামে বাংলাদেশকে পেট্রলের বার্ণ ইউনিটে পরিণত করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। দেশের মানুষ তা ভুলে যায়নি। নির্বাচন প্রতিহত করার নামে তারা ৫ হাজারের ঊর্ধ্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ধ্বংস করা। কিন্তু তারা সফল হয়নি, দেশে অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসতে পারেনি।
তিনি বলেন, সংবিধানের সাত-এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অসাংবিধানিকভাবে কেউ ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা দখলে সহযোগিতা করলে তা সুস্পষ্টভাবে ‘দেশদ্রোহিতা’ বলে গণ্য হবে। আর এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। বিএনপি যা করছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতিতেও অসাধারণ দূরদর্শিতায় দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ও অসাধারণ রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশে কেউ না খেয়ে মরেনি, বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল। শেখ হাসিনা থাকলে চিকিৎসা, খাদ্য, বাসস্থান সবকিছু নিশ্চিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিহত করতে ৭১-এর স্পিড নিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অসীম কুমার উকিল এমপি বলেন, বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের এদেশে রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে চায়।
৯০-এর স্বেরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই আন্দোলনের সময়ও বিএনপি নেতা আমান-খোকন স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করে আন্দোলনকে নস্যাতের চেষ্টা করেছিলেন। এখন বিএনপি দেশের গণতান্ত্রিক ধারা বিনষ্টের চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসব অপচেষ্টাকে সফল হতে দেবে না। এসব অপশক্তিকে প্রতিহত করে মুত্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং নারীর সামাজিক অবস্থানের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।
নারীদের অনুপ্রাণিত করতে দৈনিক ভোরের আকাশের এ সম্মাননা জানানোর উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর নাম দেশের মানুষের মন থেকে কখনো মুছে ফেলা যাবে না। বঙ্গবন্ধু দেশের নারী-পুরুষসহ সেব শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতেই দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর এখন তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে দেশ উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশে
নারীর ক্ষমতায়ন গতিশীল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে নস্যাৎ করতে একটি মহল তৎপর রয়েছে। এসব অপতৎপরতাকারীদের প্রতিহত করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
শাহে আলম মুরাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উন্নয়নের দর্শনে দেশকে পরিচালনা করছেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর তার সুযোগ্য কন্যার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই দেশের মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী এবং দেশবিরোধীদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। নাশকতা ও মানুষের সম্পদ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে এক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং দেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এগিয়ে আসতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে কোনোভাবেই, কোনো চেষ্টায়ই মুছে ফেলা যাবে না। আর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার এক বক্তব্যে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে এবং উন্নত করতে হয়, তার নজির হিসেবে শেখ হাসিনার কথা উদ্ধৃত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজ উদ্যোগে সফলভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন, যা বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় মাইলফলক।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে যে বিশ^ব্যাংক দুর্নীতির মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনেছিল, সেই বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আমাদের দেশের উন্নয়ন পার্শ^বর্তী দেশের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও ভালো চোখে দেখেন না। মহান স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখা এবং দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সবাইকে এ্যক্যবদ্ধ হতে হবে এবং তার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
অধ্যাপক অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগম বলেন, সম্মাননা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। যেকোনো প্রাপ্তিই আনন্দের। বিজয়ের মাসে এ সংবর্ধনা পেয়ে আমি আরো বেশি খুশি। আশা করি, এটা অব্যাহত থাকবে। ধন্যবাদ ভোরের আকাশ পত্রিকা ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটকে। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারন করি। আশা করি, এ চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যাবে আগামী প্রজন্ম।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে লাকী ইনাম বলেন, আমি এ অনুষ্ঠানে আসতে পেরে এবং সম্মাননা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এখানে যারা এসেছেন, তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন। বঙ্গবন্ধুর চেতনায় বিশ্বাসী। শুরু থেকেই আমরা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পৃথিবীতে এসেছিলেন বলেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি তার জন্য।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইসায়মিন অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, বিজয়ের মাসে এরকম আয়োজন খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তারা মানি বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। সংবর্ধনা পেয়ে আমি খুবই খুশি। স্মারকটি নিজের রুমে রেখে দেব। এটি দেখলেই মনে হবে আমরা আসলে এ নৌকার যাত্রী। আমরা এটাই লালন করছি।
ভোরের আকাশ/আসা