logo
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:৫৪
দক্ষিণাঞ্চলে বিআরটিসি’র বাস ডিপো
মুনাফা অর্জন করলেও নেই সম্প্রসারণে উদ্যোগ
তুহিন হোসেন, বরিশাল

মুনাফা অর্জন করলেও নেই সম্প্রসারণে উদ্যোগ

দক্ষিণাঞ্চলে বিআরটিসি’র একমাত্র বাস ডিপো। ছবিটি বরিশাল শহর থেকে তোলা

তুহিন হোসেন, বরিশাল: রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোটির নীট মুনাফা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হলেও যাত্রীসেবা উন্নত করাসহ জন গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোতে বাস সার্ভিস সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেই। দক্ষিণাঞ্চলে বিআরটিসি’র একমাত্র এ বাস ডিপোটি গত চার মাসে ২ কোটি টাকারও বেশী নীট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হলেও এখনো অচল বাসের বহরে ডিপোটির সচল বাসের স্থান সংকুলন হচ্ছে না।

 

দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার একমাত্র এ বাস ডিপোটি আগষ্ট মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা থেকে সেপ্টেম্বরে ৩ কোটি টাকারও বেশী টার্ণ ওভারের বিপরীতে দেশের শীর্ষ মুনাফা অর্জনকারী ইউনিটের মর্যাদা লাভ করে।

 

মুনাফার পুরো অর্থই সংস্থার সদর দপ্তরে জমা হলেও সচল বাসের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জন গুরুত্বপূর্ণ রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালুসহ চলমান রুটে কাঙ্খিত যাত্রী সেবা প্রদান করতে পারছে না। নানা সীমাবদ্ধতায় এখনো দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ক্ষেত্রে যাত্রীদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছে না বরিশাল ডিপো।

 

প্রতিযোগীতায় টিকতে পারছে না বেসরকারী পরিবহন সংস্থাগুলোর সাথে। বরিশাল বাস ডিপোতে বর্তমানে ৭০টি নতুন ও পুরনো বাসের মধ্যে গড়ে চালু থাকছে ৪০টি। এর মধ্যে এসি ও নন এসি মিলিয়ে নতুন গাড়ীর সংখ্যা মাত্র ২০টি। নতুন ও পুরনো এসব বাস দক্ষিণে সাগরপাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরবঙ্গের রংপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। এমনকি পদ্মা সেতু চালুর পরে বরিশাল মহানগরী ছাড়াও ভান্ডারিয়া ও কুয়াকাটা থেকেও ঢাকায় সরাসরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে যাত্রী পরিবহন করছে বিআরটিসি।

 

এছাড়াও ৫টি দোতালা ও ১টি একতলা বাসের সাহায্যে বরিশাল বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পরিবহন করছে সংস্থাটি। কিন্তু মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকা পরিচালন আয়ের এ ডিপোটিতে দীর্ঘদিন ধরেই আরো এসি বাস দেয়ার দাবীর বিষয়টি সদর দপ্তর থেকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। মাত্র ১৪টি এসি বাসের মধ্যে ১১টির সাহায্যে বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

 

এমনকি সচল ৪০টি এসি/নন এসি বাসের অন্তত ২০টিই দীর্ঘদিনের পুরনো। দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ যাত্রীদের পক্ষ থেকে বরিশাল ছাড়াও কুয়াকাটা সহ এ অঞ্চলের প্রতিটি জেলা সদর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার পাশাপাশি খুলনা-যশোর-বেনাপোল এবং রাজশাহী সহ উত্তর বঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ জেলা সদরে সরাসরি এসি বাস চালুর দাবী রয়েছে। কিন্তু এ বাস ডিপোটিতে দীর্ঘদিনেও কোনো গাড়ী বরাদ্দ নেই।

 

অতি সম্প্রতি বরিশাল-খুলনা-মোংলা মহাসড়কের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর ওপর নির্মিত ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা অষ্টম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু চালুর ফলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে ফেরিবিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের সাথেও খুলনা, যশোর, বেনাপোল ও ভোমরা বন্দরের সহজ সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

মাত্র দুই ঘন্টায় বরিশাল ও খুলনার মধ্যে ১০৫ কিলোমিটার দূরত্বের মহাসড়ক পাড়ি দিচ্ছে বেসরকারী যানবাহনগুলো। কিন্তু প্রয়োজনীয় মানসম্মত বাসের অভাবে বেসরকারী বাস-মিনিবাসের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে পারছে না রাষ্ট্রীয় বিআরটিসি। বর্তমানে বরিশাল থেকে সকাল-বিকেল এ রুটে মাত্র ৩টি ও কুয়াকাটা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনায় আরো দুটি বাস সার্ভিস পরিচালিত হলেও তার ৩টিই দীর্ঘদিনের পুরনো।

 

নিকট অতীতের বরিশাল-খুলনা-যশোর-বেনাপোল রুটেও সংস্থাটির কোনো বাস সার্ভিস এখন অবশিষ্ট নেই। অপরদিকে অক্টোবরে বরিশাল-গোপালগঞ্জ-নড়াইল-যশোর মহাসড়কের কালনায় দেশের প্রথম ৬ লেনের ‘মধুমতি সেতু' চালুর মধ্য দিয়ে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল থেকে যশোর ও বেনাপোলের ফেরিবিহীন সংক্ষিপ্ত ও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

কিন্তু এ রুটেও যাত্রীবান্ধব সেবা প্রদানের মত কোনো বাস রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির বরিশাল ডিপোতে অবশিষ্ট নেই। অথচ এ সেতুটি চালুর ফলে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে যশোর ও বেনাপোলের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার হ্রাস পেয়েছে।

 

এসব বিষয়ে বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোর ব্যবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি সীমিত সাধ্যের মধ্যেও ঢাকা, খুলনা ও বেনাপোলসহ সব জন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সাথে যাত্রীবান্ধব সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করার কথা জানান। এজন্য সদর দপ্তরের কাছে আগেই এসি বাস চেয়ে আবেদনের কথাও জানান তিনি। গাড়ীর ব্যবস্থা হলে যাত্রী সেবা সম্প্রসারণসহ মান উন্নত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি