সবুজ গালিচায় পায়ে অবাক করা সব চিত্র এঁকে চলেছেন মেসি। বাম পায়ের এ খুদে জাদুকর চামড়ার বলটি নিয়ে যেভাবে বাস্তব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন, তা কোনো নাট্যকারের পক্ষেও হয়তো সম্ভব নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার অ্যাসিস্টের কথা। অমন একটা পাস দেয়ার কথা কারো মাথায়ই আসার সম্ভাবনা কম। এমন সব কীর্তি দিয়ে মেসি এবারের বিশ্বকাপটা নিজের করে নিয়েছেন। এখন একটা মাত্র কাজ বাকি। তা হচ্ছে ফাইনাল ম্যাচ। মেসি এ পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্ব কাপ খেলেছেন। ৫ বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত তার ম্যাচের সংখ্যা ২৫। আজকের ম্যাচে মাঠে নামলেই বিশ^কাপের তার খেলা ম্যাচের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬। আর এ সংখ্যাটা তাকে অন্যদের থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাবে। এবার দেখে নেয়া যাক মেসি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো।
২০০৬ বিশ্বকাপ : লিওনেল মেসির প্রথম বিশ্বকাপ। ১৬ জুন সার্বিয়া মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে নামেন ১৯ বছর বয়সি মেসি। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেই চমক দেখান। নিজে গোল করেন একটি এবং সতীর্থদের দিয়ে করান একটি গোল। এ গোলের মাঝ দিয়ে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে কম বয়সি খেলোয়াড় হিসেবে বিশ^কাপে গোল করার কৃতিত্ব দেখান। পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিনি প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সিকোর বিপক্ষে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। ম্যাচের সংখ্যা বাড়লেও গোলের সংখ্যা বাড়েনি। মোট তিন ম্যাচ খেলেন তিনি।
২০১০ বিশ্বকাপ : আগের বিশ্বকাপে মেসির জার্সি নম্বর ছিল ১৯। এবার জার্সি নম্বর ১০। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ ভালোভাবে পার হয় আর্জেন্টিনা। কিন্তু কোনো গোলের দেখা পাননি মেসি। এ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে এসে মেসির অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড দেখা যায়। মাশচেরানোর অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় আর্জেন্টিনাকে। মেসির ম্যাচ সংখ্যা ৫ হলেও গোলের খাতা ছিল শূন্য। ফলে দুই বিশ্বকাপ মিলে ৮ ম্যাচে তার গোলের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১।
২০১৪ বিশ্বকাপ : মেসির তৃতীয় বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচেই গোলের দেখা পান। বসনিয়া-হার্জেগোভিনার বিপক্ষে গোল করেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে গোলের দেখা পান তিনি। গ্রুপ পর্বের বাকি দুই ম্যাচ ইরান ও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গোল করেন তিনি। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন মেসি। এখানেই থেমে যায় মেসির গোলের খাতা। দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেললেও মেসি গোলের সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। ৭ ম্যাচে তার গোল চারটি। আর তিন বিশ্বকাপ মিলে ১৫ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচটি।
২০১৮ বিশ্বকাপ : মেসির ক্যারিয়ারের চতুর্থ বিশ^কাপ। এটি তার প্রথম বিশ্বকাপের মতোই। মাত্র একটা গোলের দেখা পান। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে একমাত্র গোলটি পেয়েছিলেন। তার এ গোলের সুবাদে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল। তারপর ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল। চার ম্যাচ খেলে মেসি একবারই প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠাতে পেরেছিলেন। ফলে চার বিশ^কাপ মিলে ১৯ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ছয়ে।
২০২২ বিশ্বকাপ : ক্যারিয়ারের পঞ্চম বিশ্বকাপে মেসির বয়স ৩৫। এ বয়সেই বিশ্বকাপে সেরাটা দিয়ে চলেছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। একের পর এক গোল করে চলেছেন। আগে যা করতে পারেননি তাই করে যাচ্ছেন। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের দুটিতে গোল করেছেন। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে মেসি কখনো নকআউট পর্বে গোলের দেখা পাননি। অথচ এবার নকআউট পর্বে এ পর্যন্ত খেলা তিন ম্যাচেই গোলের দেখা পেয়েছে তিনি। দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালে গোল করেছেন। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৫। আর বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২৫ ম্যাচে ১১, যা তাকে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের মালিকানা এনে দিয়েছে। তার আগে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের কীর্তি ছিল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার। তার গোল সংখ্যা ছিল ১০।
ভোরের আকাশ/আসা