logo
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৫১
আ.লীগ শাসনের টানা ১৪ বছর
উন্নয়নে নতুন উচ্চতায় দেশ
নিখিল মানখিন

উন্নয়নে নতুন উচ্চতায় দেশ

নিখিল মানখিন: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার টানা ১৪ বছর পার করতে চলেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। এ সময়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা।

 

তারা বলছেন, আজকের বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আদলে বদলে যাওয়া একটি দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, তৃণমূলের জন্য গৃহীত উদ্যোগ এবং নিজে থেকে কিছু করার জন্য মানুষের অদম্য বাসনা উন্নয়ন আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে। উন্নয়নের ‘রোলমডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রশংসিত হয়েছে দেশ।

 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা দ্বিতীয়বারের মতো যাত্রা শুরু করে।

 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে।

 

মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ১৪ বছরে দেশ উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ কারণে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ খাদ্যশস্য-উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.২ শতাংশ। মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

 

ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের আকাশকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। এটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে। তিনি চেয়েছিলেন, ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা সে ধারাবাহিকতা রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

সাবেক এ ভিসি বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ধরে দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল, কিন্তু দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের চাইতে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ, কিন্তু এ সময়ের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ। স্বাস্থ্যসেবা খাতের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। দেশের শতভাগ এলাকা এখন বিদ্যুতের আওতায়। স্কুলে পড়ার মতো বয়সি প্রায় শতভাগ শিশুই এখন স্কুলে যাচ্ছে। এমনকি এসএসসি পর্যায় পর্যন্ত একটা বড় সংখ্যার শিক্ষার্থীকে বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে।

 

প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে (প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত) বিভিন্ন উপবৃত্তি এবং বৃত্তি দিচ্ছে সরকার। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

 

মেগা প্রকল্পগুলো : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

 

এসবই সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। এসব প্রকল্পে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক নিজস্ব তদারকি। আর ইতোমধ্যে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ এবং পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি মাসের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হবে প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। তলাবিহীন ঝুড়ির খেতাব পাওয়া ছোট্ট বদ্বীপটি আজ বিশ্বের ৪২তম অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতির আকার ৩০০ বিলিয়ন ডলার। প্রতিযোগী এবং পার্শ্ববর্তী অনেক দেশকে পেছনে ফেলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এখন ৮.১৫ শতাংশ।

 

বিবিএস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব সূচকের প্রথম যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২০ সালের হিসাবে যা ৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপি আকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ। হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা বা ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।

 

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২.৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ শতাংশ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪.৮ শতাংশ। মাত্র ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে দেশ, তা আজ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার, যা জিডিপির ১৫.৪০ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৫০ শতাংশ।

 

শুধু বাজেট কেন, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি, মাথাপিছু আয় ও মানবসম্পদ সূচকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে। এইচবিএসসির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।

 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলেছে, ২০১০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৩.৫। ২০১৮ সালে তা ১০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। তাদের হিসাব- ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন এইচএসবিসির গেøাবাল রিসার্চের তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি নিরিখে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ, বর্তমানে যেখানে ৪২তম।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ : সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আসলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ, যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০০৯ সালে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা দেশের সব মানুষের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ডিজিটাল অর্থনীতি ও ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলার ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

 

এসব কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের জন্য আইন, নীতিমালা প্রণয়ন থেকে শুরু করে সামগ্রিক কার্যক্রমের পরামর্শ ও তদারকি করছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ডিজিটাল সেন্টার সাধারণ মানুষের জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সুফল দেশের প্রত্যেক মানুষ পাচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না।

 

এটা সম্ভব হচ্ছে মূলত সারা দেশে একটি শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামো গড়ে ওঠার কারণে, যা গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে বিশ্বের দরবারে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সেক্টরভিত্তিক উন্নয়ন ছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও পঁচাত্তরের ঘাতকদের বিচারের আওতায় এনে সাজা প্রদানের ব্যবস্থা করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছে।

 

বিচারের কাঠকগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে ২১ আগস্টের সন্ত্রাসীদের। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারগুলোর জন্য সৃষ্টি করেছে অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা।

 

ভোরের আকাশ/নি