খুলনায় চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার এখনো অস্বাভাবিক রয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না এ দুটি পণ্য। ফলে ক্রেতাদের অতিরিক্ত মূল্যেই চিনি ও ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, কেজিতে চিনির দাম ১৩ টাকা বাড়িয়েও এক মাসে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও সরকার নির্ধারিত দামে তা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ১৭ নভেম্বর ১০৮ টাকায় চিনির দর নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু খুলনার ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে তা বিক্রি করছেন ১১৫-১২০ টাকায়। অপরদিকে তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১৮৭ ও খোলা তেল ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হলেও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোজ্যতেল সয়াবিন যথাক্রমে ১৯০ ও ১৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন।
খুলনা বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আশা স্টোরের মালিক আসিফ বলেন, দেশে উৎপাদিত চিনির সরবরাহ খুব কম। ৩০ শতাংশ চিনি আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। মিল থেকে যা আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
সরবরাহের পরিমাণ কম কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে চিনিকলের সংখ্যা ১৬। সেখানে আটটি মিল চালু আছে। তা ছাড়া মিল মালিকরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। সরবরাহের পরিমাণ প্রতিদিন কমছে।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কম। প্রতিবেশী দেশ ভারতও চিনি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তা ছাড়া দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে এক দিনে বাজারে ধস নামবে। দর নিয়ন্ত্রণে এলসি চালু ও বড় বড় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। বাজারের তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় বেশ স্বাভাবিক। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দরে কোথাও তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী রেজা অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক শাহ আলম মৃধা বলেন, সরকার নির্ধারিত রেটের তেল এখনো বাজারে আসেনি। এলে কম দাম রাখা হবে।
দোলখোলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. মুক্তা বলেন, দাম বৃদ্ধির আগে ব্যবসায়ীরা আগাম জানান দেয়। লিটারে পাঁচ টাকা সরকার কমিয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা কম নিচ্ছেন না। আমাদের বেশি দরে কিনে এ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
অপরদিকে বাজারে চাহিদার তুলনায় ছোলা ও ডালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় যথাক্রমে ৮৫ এবং ১০৫-১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। খেজুরের সরবরাহ কম। তাই এর দাম বেশি। রোজার মাস এলে সরবরাহ বেড়ে যায়। বর্তমানে সরবরাহ কম থাকায় প্রতি কেজি খেজুর ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরবরাহ কম থাকায় খেজুরের দাম বেশি। আমদানি বেশি হলে খেজুরের দাম কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে টাকা থেকে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় খেজুরের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। কেজিতে চার টাকা বেড়ে এখন ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
একই বাজারের মসলা ব্যবসায়ী শেখ তানভীর হোসেন বলেন, করোনাপূর্ব সময়ে মসলার দাম কম ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর দাম ব্যাপক বাড়ে। গত ৬ মাস ধরে মসলার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে তা মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ ১১০০-২৪০০, লবঙ্গ সাড়ে ১২০০ ও গোল মরিচ ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
ভোরের আকাশ/আসা