logo
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৪২
ছোট হয়ে আসছে শীতকাল
শীতের অপেক্ষায় পার ডিসেম্বর মাস
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতকালের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা দুই-ই কমেছে
শাহীন রহমান

শীতের অপেক্ষায় পার ডিসেম্বর মাস

শাহীন রহমান: ২২ ডিসেম্বরকে উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে ছোট দিন বলা হয়। তাও পেরিয়ে গেছে দুদিন আগে। অথচ এই গোলার্ধের সবচেয়ে ছোট দিনেও জাঁকিয়ে শীত পড়েনি দেশের কোথাও। জোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্য ইতোমধ্যে দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে যাত্রা শুরু করেছে। এখন দিনের ভাগ আস্তে আস্তে আস্তে বাড়বে। কিন্তু দিনের ভাগ বাড়তে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত শীতের দেখা নেই।

 

এভাবে পার হতে চলেছে শীতের ভরা মৌসুম ডিসেম্বর মাস। শুধু এ বছর নয়, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে শীতের এমন আচরণ শুরু হয়েছে। ফলে শীত ঋতুতে পর্যাপ্ত শীত মিলছে না। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, প্রকৃতি থেকে শীতের ব্যাপ্তি ক্রমে কমে ছোট হয়ে যাচ্ছে শীতকাল।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এ বছরের ডিসেম্বর মাসে গত বছরের চেয়ে কম শীত পড়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, নভেম্বরে বৃষ্টি না হওয়া ডিসেম্বরে কম শীত পড়ার একটি কারণ। এ ছাড়া এ সময় উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাতে শীত পড়ে। কিন্তু এবার তা হয়নি এখনো।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে এ পর্যন্ত মাত্র তিন দিন সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০-এর নিচে গেছে। রাজধানীতে এক দিনও যায়নি। রাজধানীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিসেম্বর ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আশা ছাড়েনি তারা। আবহাওয়াবিদ উমর ফারুক বলেন, ২৯ ডিসেম্বর নাগাদ জাঁকিয়ে শীত নামতে পারে।

 

তবে শীতকালে শীত না পড়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শীত ঋতুতে শীত নামবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গেøাবাল ওয়ার্মিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শীত ঋতুতে। এ কারণে পর্যান্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বাতাসে জলীয় বাষ্পের মাত্রা বেশি থাকছে। যে কারণে তাপমাত্রা কমছে না। প্রকৃতি উষ্ণ থাকছে। শীতকালে আবহাওয়ার এ ধরনের আচরণ অস্বাভাবিক হিসেবেও দেখছেন তারা। গেøাবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে ক্রমেই শীতকাল ছোট হয়ে আসছে।

 

আবহাওয়ার হিসাব অনুযায়ী এখানে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত প্রায় আড়াই মাস জাঁকিয়ে শীত নামার কথা। তবে আগে-পরে মিলে তিন মাসের বেশি শীতের অনূভ‚তি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন ডিসেম্বর পেরিয়ে গেলেও কাক্সিক্ষত শীতের দেখা মিলছে না। রাজধানীর বাসিন্দারা জানান, তারা এখনো শীতের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। শীতে না আশায় এখন পর্যন্ত গরম কাপড়ও বের করা হয়নি। কবে নাগাদ শীত পড়বে, তা অজানা।

 

আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এখানে মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুযায়ির পর্যন্ত জাঁকিয়ে শীত নামে। এর আগে-পরে সব মিলিয়ে দুই মাসের বেশি শীত পাওয়া যেত। এখন ডিসেম্বর পার হতে চলল কিন্তু শীতের দেখা মিলছে না। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি উষ্ণ হয়ে শীত ঋতুতে এর প্রভাব পড়ছে। ফলে শীতকাল বেখেয়ালি আচরণ করছে। যাকে তিনি অস্বাভাবিক মনে করছেন।

 

আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমেই শীত ঋতুর ব্যাপ্তি কমে আসছে। এই ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ থেকে একশ ভাগ পর্যন্ত কম হচ্ছে। গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতকালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়ছে। শীতকালে (ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে) যেখানে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫.৪ ও ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৪.২ ও ১২.৪ ডিগ্রি। দেখা গেছে, এই তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে।

 

এদিকে শীতকালে আবহাওয়ার এই অস্বাভাবিক আচরণে শীতকালীন ফসলের ওপর প্রভাব পড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিসের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, শীতকালে এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গমে রোগের আক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গম চাষ সম্ভব হবে না।

 

বিগত ২৫ বছরের আবহাওয়ার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, দেশের গড় উষ্ণতা তেমন না বাড়লেও আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রি, ২০৫০ সালে ১.৪ ডিগ্রি এবং ২১০০ সাল ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। এতে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বেড়েছে। এ কারণে দেশে ক্রমান্বয়ে শীতকালের ব্যাপ্তি ও শীতের তীব্রতা দুই-ই কমে আসছে।

 

ভোরের আকাশ/নি