এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া: জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন শূন্য হয়েছে। এই নির্বাচনী আসনগুলোতে বইছে নির্বাচনের হাওয়া। শূন্য আসন দুটির উপনির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নেমেছেন প্রচারে। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থেকে প্রচার চালিয়ে আসছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরব হয়ে উঠেছেন।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জেলা জাসদ সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন (নৌকা), বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের মোশাররফ হোসেন (ধানের শীষ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের কাজী এমএ কাশেম (ফুলের মালা), ইদ্রিস আলী (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলম (সিংহ) প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের মোশাররফ হোসেন এক লাখ ২৮ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম মহাজোটের রেজাউল করিম তানসেন পান ৮৬ হাজার ৪৮ ভোট। ভোটার তিন লাখ ১২ হাজার ৮১ জন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা ও কাহালু উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন গঠিত। আসনটিতে ২০১৮ সালে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৪৪। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪১০ ও কাহালু উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৩৪।
আগামী উপনির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন কেন্দ্রীয় জাসদের সহসভাপতি, জেলা সভাপতি, ১৪ দলের সাবেক এমপি একেএম রেজাউল করিম তানসেন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যক্ষ আহসানুল হক, তৌহিদুল করিম কল্লোল, নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা, নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কামাল উদ্দিন কবিরাজ, জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা ফারুক, আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় চলছে নির্বাচনের আলোচনা। এবারের প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিএনপি (ধানের শীষ) থাকবে না, তাই কে হচ্ছেন নৌকার কাÐারি সেটা নিয়েই আলোচনা চলছে বেশি। ভোটারদের অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনে নৌকা মার্কা যে পাবে সেই হবে এমপি। তবে নির্বাচনের এসব আলোচনায় সাবেক এমপি রেজাউল করিম তানসেনের নামটাই এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। এবারো তিনি জোটের প্রার্থী হচ্ছেন বলেই মনে করছেন তারা।
নন্দীগ্রামের রিকশাচালক জাফর বলেন, ‘আমাদের এখানে আবার ভোট হবে শুনছি। এ নির্বাচনে তানসেন এমপির নামটাই বেশি শোনা যাচ্ছে। এর আগে সেই এইখানের এমপি ছিল। গতবার নৌকা নিয়ে ভোট করেছিল।’
কাহালুর মুদি দোকানদার মামুন মিয়া বলেন, নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীই বিজয়ী হবে। গত নির্বাচনেই তো তানসেন সাহেব নৌকা নিয়ে ভোট করেছেন। তাই এবারো তিনি যদি নৌকা পান তাহলে ঠেকানোর কেউ নেই।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রয়োজনে আমাকে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হব। তবে সভানেত্রী নৌকার কাÐারি হিসেবে যাকে যোগ্য মনে করবেন, তার পক্ষেই কাজ করব।
কেন্দ্রীয় জাসদের সহসভাপতি, জেলা সভাপতি, ১৪ দলের সাবেক এমপি একেএম রেজাউল করিম তানসেন বলেন, ’৯১ সাল থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছি। এর মধ্যে ২০০৬ সালে ১৪ দলীয় জোট শরিক হিসেবে নৌকা মার্কা পেয়েছিলাম। ওয়ান ইলেভেনের কারণে সেবার নির্বাচন হয়নি। পরে ২০০৮ সালে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছি।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি। আবার ২০১৮ সালেও নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছি। এর আগে নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। গত নির্বাচনে হারলেও এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের মধ্য দিয়ে প্রচারের মধ্যেই রয়েছি। এবারের উপনির্বাচনেও দল এবং জোটের কাছে মনোনয়ন চাইব। কী হবে সেটা সময়ই বলে দিবে।
আহসানুল হক বলেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলাম। কিন্তু জোটের শরিককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এবারের নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান তিনি।
কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ জানান, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তিনি আবেদন করবেন। দল তাকে মনোনয়ন দিবে বলে তিনি আশাবাদী।
অপরদিকে হিরো আলম জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
ভোরের আকাশ/নি