শাহীন রহমান: কে হচ্ছেন রংপুরের নগর পিতা ফয়সালা হবে আজ মঙ্গলবার। রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) এলাকার ৪ লাখের অধিক ভোটার তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ে সকাল থেকেই ভোট দেবেন। ৮টা থেকে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। কোনো বিরতি ছাড়াই চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। রংপুরের পাশাপাশি আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকেও নির্বাচন মনিটর করা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ভোট স্থগিত করা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কোনো আপস করা হবে না। ২২৯টি কেন্দ্রে সিটির ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ ভোটার ভোট দেবেন। এজন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন। অপর দিকে মহিলা ভোটার রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আব্দুল বাতেন।
ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক ও যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানান, রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। অন্যদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়া এসব প্রার্থীর মধ্যে থেকে ভোটাররা একজন মেয়র, ৩৩ কাউন্সিলর ও ১১ সংরক্ষিত কাউন্সিলর বাছাই করবেন। এদিকে রংপুর সিটির নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা।
গতকাল সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৮৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমে এ কেন্দ্রগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে। গাইবান্ধা নির্বাচনে অনিয়মের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রংপুরে সমস্যা হলে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে। ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এখানেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন সবাইকে মিলে করতে হবে। প্রার্থীদের আচরণ হবে বিধিমালা অনুযায়ী। আমাদের লোকবল খুব বেশি নয়, তবু আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করব।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, রসিক নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ১ হাজার ৮০৭টি সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করা হবে। এজন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কারণে ভোটার ছাড়া অন্য কেউ ভোটকক্ষের গোপন বুথে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রবেশ করলেই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়বে এবং তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কর্মকর্তারা জানান, এ নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম।
নির্বাচনে কাজ নিয়োজিত রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৭ হাজার সদস্য। মাঠে থাকছে র্যাব ও বিজিবিসহ শতাধিক পুলিশের টহল টিম। ইসি যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান সোমবার জানান, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপির সমন্বয়ে সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জনের এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে ৪৯ জন। এদের মধ্যে নির্বাহী হাকিম ৩৩ ও বিচারিক হাকিম রয়েছেন ১৬ জন। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন। এছাড়া র্যাব, বিজিবি একাধিক টিম নির্বাচন এলাকায় রয়েছে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
রসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী যারা : রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৯ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এর মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমার মোস্তাফার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার। আর বাইরে আরো ৭ প্রার্থী রয়েছেন। ৯ প্রার্থীর মধ্যে দুজন রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন।
২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। ২০১২ সালের রসিক নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফা ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। ওই বছর ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪। এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ২২৯ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ৩৪৯ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ২ হাজার ৬৯৮ পোলিং অফিসার থাকবেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সিসিটিভির আওতায়। এজন্য ভোটগ্রহণের শুরু থেকে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পোলিং এজেন্টরা নিজ নিজ জায়গায় বসে থাকবেন। কেউ গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। আশা করি, সবার সহযোগিতায় একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ভোরের আকাশ/নি