শাহীন রহমান: খেজুরের রস, পাটালি গুড়, পিঠা-পুলি সবই আছে। নেই শুধু শীত। পুরো ডিসেম্বর মাস বলতে গেলে শীতবিহীন গেছে। ভরা পৌষে শীতের দেখা না পেয়ে হতাশ অনেকেই। গরম কাপড় গায়ে জড়িয়েও মজা পাচ্ছেন না। ঘেমে নেয়ে একাকার। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অবশেষে শীতের চাকা ঘোরার আভাস পাওয়া গেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই জাঁকিয়ে শীত নামতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আজো কোথাও কোথাও বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। এর পরই আকাশ থেকে মেঘের ভাব কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। শুক্রবার থেকে জাঁকিয়ে শীত নামবে। আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম সোমবার বলেন, আজ বুধবার মেঘলা আবহাওয়া কেটে গিয়ে আকাশ পরিচ্ছন্ন হতে পারে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। শুক্র-শনিবারের দিকে শীতের অনুভ‚তিও বাড়বে সর্বত্র। জানুয়ারির শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আভাস রয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার কারণে একটি নিম্নচাপ বিরাজ করছে। এর প্রভাব পুরো বঙ্গোপসাগরজুড়ে উচ্চচাপবলয় তৈরি হয়েছিল। বাতাসে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঢুকে শীত বাধাগ্রস্ত করছে। নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সে বাধা অবশেষে কাটছে। কড়া শীতের হাত ধরেই আসছে নতুন বছর। তারা জানান, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই উত্তুরে হাওয়ার দাপটে সরে যাবে উচ্চচাপবলয়।
নতুন বছরেই শীতের আমেজ ফিরবে। তারা জানান, শ্রীলঙ্কার কাছে থাকা নিম্নচাপটি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে বঙ্গোপসাগরে থাকা উচ্চচাপ বলয়ও দুর্বল হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। গাঙ্গেয় উপত্যকায় হু-হু করে ঢুকে পড়বে কনকনে উত্তুরে বাতাস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে ঢাকায় ৪.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় টাঙ্গাইলে ৬ মিলিমিটার, নিকলিতে ৫ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ১ মিলিমিটার, বগুড়ায় ৩ মিলিমিটার, তাড়াশে ১ মিলিমিটার, নেত্রকোনায় ২ মিলিমিটার এবং সিলেটে সর্বোচ্চ ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগে হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকতে পারে। মঙ্গলবার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ডিসেম্বর মাস যে কারণে শীতশূন্য : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার বর্ষায় বলতে গেলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। শীতকাল শুরুর আগে থেকে বঙ্গোপসাগরজুড়ে ঘন ঘন লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য ডিসেম্বরে একটি লঘুচাপ অবশেষে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ভারতের উড়িষ্যা, তামিলনাড়–র দিকে চলে যায়। কিন্তু এই লঘুচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দেশে না পড়লেও এর ফলে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বাতাসে ঢুকে শীত বাধাগ্রস্ত করেছে।
তারা বলেন, শ্রীলঙ্কার কাছে তৈরি হওয়া একটি শক্তিশালী নিম্নচাপই ভরা পৌষের শীতকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ওই নি¤œচাপ থেকে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বঙ্গোপসাগর হয়ে গাঙ্গেয় উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ওই নিম্নচাপ অক্ষরেখাই গোটা পূর্ব ভারত এবং সংলগ্ন বাংলাদেশের ওপরে একটি উচ্চচাপবলয় বা বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত্য তৈরি করেছে, যা বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প টেনে আনছে। কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশাও দেখা দিয়েছে একই কারণে। দু-একদিনের মধ্যে শ্রীলঙ্কার কাছে নিম্নচাপটি দুর্বল হলে দ্রুতই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। শীতের রাস্তা খুলে যাবে।
অবশ্য আবহাওয়াবিদদের কেউ কেউ ডিসেম্বরে শীত না পড়ার কারণ হিসেবে আবার উচ্চচাপ বলয়ের সঙ্গে অন্য একটি কারণও যুক্ত করছেন। তাদের ব্যাখ্যা হলো, এবার নভেম্বর মাসে একেবারেই বৃষ্টি না হওয়াটা ডিসেম্বরে কম শীত পড়ার অন্যতম কারণ।
তারা বলেন, সচরাচর নভেম্বর মাসে বৃষ্টি হলে তাতে পরিমন্ডলে জমে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। তাই উত্তরের হাওয়া বিনা বাধায় পশ্চিমে ঢুকে পড়তে পারে। আকাশে মেঘ না থাকলে আবহাওয়া এমনিতেই ঠান্ডা থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টিহীন ছিল গোটা নভেম্বর মাস। তাই বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ আগে থেকেই বেশি ছিল। সে কারণে উচ্চচাপবলয়ের পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। ফলে পুরো ডিসেম্বরে শীতের দেখা মেলেনি।
ভোরের আকাশ/নি