logo
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:০৮
কক্সবাজার পর্যটকে ভরপুর থাকবে আরো দুই সপ্তাহ
এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

কক্সবাজার পর্যটকে ভরপুর থাকবে আরো দুই সপ্তাহ

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার: পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার। টানা তিন দিনের ছুটি শেষ হলেও পর্যটকের আনাগোনায় ফের সরব হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। গত তিন দিনে কক্সবাজারে পর্যটন খাতে ব্যবসা হয়েছে ৯০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার। শুধু এই তিন দিনে শুঁটকি বিক্রি হয়েছে ৪০ কোটি টাকার। শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যটক শুঁটকি না কিনে কক্সবাজার ত্যাগ করেন না।

 

স্বল্প ব্যয় ও সহজ পথে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ বন্ধ থাকা সত্তে¡ও কক্সবাজারে মধ্য ও নি¤œবিত্ত পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ফলে গেস্ট হাউস, কটেজ ও ননস্টার হোটেলগুলো এখন আর ফাঁকা নেই। মৌসুমের এ সময়ে চলছে পর্যটন ব্যবসা।

 

আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে কোনো হোটেল কক্ষ খালি নেই। তবে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বুকিং আছে ৮৫ শতাংশ হোটেল কক্ষ। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলা কর্ণফুলী ও বার আউলিয়া জাহাজের টিকিট

 

 

আগাম বুকিং হয়ে গেছে ৭০ শতাংশ। তিন দিনের ছুটিতে ৬ লাখের বেশি পর্যটকের উপস্থিতি ঘটেছে কক্সবাজারে। এ সময় ভালো ব্যবসা হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের।

 

হোটেল গ্র্যান্ড সেন্ডির মালিক ও পরিচালক আবদুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে গড়ে দেড় থেকে এক লাখ ৮০ হাজার পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।

 

কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় পর্যটকের সংখ্যা এ মৌসুমে ভালো হয়েছে। আশা করছি, পুরো মৌসুমজুড়ে থাকবে পর্যটক।

 

কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, মানুষের হাতে টাকা-পয়সা পর্যাপ্ত রয়েছে। বর্তমান সরকার দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় নিয়ে গেছে। দেশকে উন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত পর্যটকের আগমন মাথায় রেখে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ।

 

নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা, তথ্যসেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি মিজানুজ্জামান চৌধুরী।

 

হোটেল মালিকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ছুটি টার্গেট করে এক সপ্তাহ আগে থেকে আগাম বুকিং হয়ে আছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল- মোটেল-রিসোর্ট। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রæত প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সৈকতে।

 

ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারের সিংহভাগ হোটেল আগাম বুকিং হয়েছিল। পর্যটকরা অনলাইনে রুম চাইলেও দেয়া যাচ্ছে না।

 

তারকা হোটেল মিডিয়া ইন্টার ন্যশনাল লিমিটেডের মালিক শাহ আলম চৌধুরী বলেন, পর্যটন মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন কমবেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করেন। সরকারি দিবসের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা ছুটি পেলে পর্যটক সমাগম বাড়ে। আমাদের হোটেলে জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত খালি নেই।

 

কলাতলীর হোটেল সায়মনের ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দীন বলেন, হোটেল- মোটেলে যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা তারচেয়েও লোক সমাগম বেশি। রুম বুকিং করে যারা এসেছেন, তারা ছাড়া বাকিরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। দেড় লক্ষাধিক লোক থাকার আয়োজন রয়েছে কক্সবাজারে। কিন্তু এই তিন দিনে ৬ লাখের বেশি পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে।

 

সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সৈকতে নিয়মিত থাকেন। বন্ধের দিনে এ সংখ্যা বাড়ে। ঢেউয়ের তালে দাপিয়ে বেড়ান সব বয়সি পর্যটক। তাদের নিরাপদ রাখতে সতর্কতায় থাকি আমরা।

 

তারকা হোটেল লংবিচ লিমিটেডের পরিচালক সোহাইনুল ইসলাম বলেন, করোনা আমাদের ঋণগ্রস্ত করেছে। বিজয় দিবসে পর্যটক উপস্থিতি বাড়বে ভেবেছিলাম কিন্তু বন্ধের দিন পড়ায় বাড়তি সুবিধা হয়নি। চলতি সপ্তাহে শুক্র থেকে রোববার পর্যটকের উপস্থিতি আমাদের আশান্বিত করছে।

 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকত ও আশপাশে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সৈকতে বিচবাইক নিয়েও রয়েছে টহল। তিনটি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকত পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের অনাকাক্সিক্ষত হয়রানি রোধ, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্য সৈকতে ঘুরছেন। পাশাপাশি র‌্যাবের টহলও জোরদার রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটক নিরাপত্তায় সবসময় সতর্ক রয়েছি আমরা।

 

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ প্রতিটি পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে থাকছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

তিনি বলেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা জোন করা হচ্ছে। বর্তমানে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী ৪/৫ বছরে দৈনিক পাঁচ থেকে সাত লাখ পর্যটক থাকার আবাসন তৈরি হচ্ছে। মেরিন ড্রাইভ সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে।

 

কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজার হতে যাচ্ছে পর্যটন রাজধানী। আগামীতে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পই হবে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। সে লক্ষ্য নিয়ে কক্সবাজারে চলছে উন্নয়নের মেগা প্রকল্প।

 

ভোরের আকাশ/নি