logo
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৩:৩৯
মিশ্র ফলবাগান করে সফল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেজাউল
আশরাফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মিশ্র ফলবাগান করে সফল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেজাউল

ছবিতে ফলচাষী রেজাউল করিম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল করিম তার বাড়ির সামনে গড়ে তুলেছেন একটি মিশ্র ফলবাগান। ৪০০টি মাল্টা গাছের ফাঁকে ফাঁকে ৪০০টি বরই গাছ লাগিয়েছেন। গাছের ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বরই। কিছুদিন আগেই এই ৪ বিঘা জমিতে মাল্টা বিক্রি করে ৩ লাখ টাকার উপর লাভ করেন তিনি।

 

মাল্টা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই এবার বড়ই নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন রেজাউল। বলসুন্দরী কুল বিক্রি করে গতবছর ৪ বিঘায় ৪ লাখ টাকার মতো লাভ করেছিলেন। আগের তুলনায় ফলন ভালো হওয়ায় আশা করছেন এবার ৬ লাখের মতো লাভ হবে। প্রথম বছর হিসেবে গতবার খরচের পরিমাণ একটু বেশি ছিল, এজন্য লাভ কম হয়। এবার আর চারা কিনতে হবে না। তাই লাভও বেশি হবে।

 

সার, কীটনাশক, জমি প্রস্তুতসহ যাবতীয় খরচ সর্বসাকুল্যে ১ লাখ টাকা। ৪ বিঘা জমির এক বাগান থেকে বছরে ১০ লাখ টাকা লাভ করা খুব সহজ কথা নয়। মিশ্র বাগান বলেই এমন স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান তিনি। মাল্টা গাছের বয়স ৩৬ মাস। এর ভিতর দু'বার ফলন হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে প্রথমবার ৫০ হাজার এবং সর্বশেষ দ্বিতীয় বছর ৩ লাখ টাকা লাভ করেন। সামনে মাল্টার বিক্রিও বাড়বে।

 

ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে মাল্টা গাছে ফুল আসা শুরু করে। বিক্রি হবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। মাল্টা শেষে বরই, বরই শেষ হবার পর মাল্টা। এভাবেই চলতে থাকবে তার মিশ্র বাগানে ফল বিক্রির স্বপ্নের কর্মযজ্ঞ। পাশাপাশি আরো এক বিঘায় নতুন করে ভারতসুন্দরী কুলচাষ করেছেন তিনি। বলসুন্দরী কুল আগামী দিন দশেক অর্থাৎ ইংরেজি নতুন বছরের শুরুর দিক থেকে বিক্রি শুরু হবে।

 

গতবছর ১০০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এবছরও দর ভালো পাওয়ার আশা তার। বলসুন্দরী কুল কেজিতে ২২-২৪টি হয়ে থাকে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দু'মাস বিক্রি চলবে। এরপর বরই গাছের সব ডালপালা কেটে ছোট করে দেয়া হবে। প্রতি বিঘায় একশ বলসুন্দরী বরই এর চারা লাগিয়েছেন। একফুট লম্বা চারা ৬৫ টাকা দরে কিনেছিলেন।

 

এখন দাম কমেছে, ৩০-৪০ টাকায় পাওয়া যায়। ১০ মাসে ফলন আসে। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন; তবে প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য বলে জানান তিনি। সেচের সমস্যার কথা বলেন। কৃষি অফিস কৃষকদের দিকে আর একটু খেয়াল রাখলে কৃষিতে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে এই কৃষি উদ্যোক্তার বিশ্বাস। গাছের যত্নের ব্যাপারে তিনি বলেন, বলসুন্দরী কুল গাছে ছত্রাকের সমস্যা প্রকট। ফুল থেকে হারভেষ্ট করার আগ পর্যন্ত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে যেতে হয়। এজন্য মাসে একাধিকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন।

 

মাসে অন্তত একবার পরিমাণমত জৈব এবং রাসায়নিক সারের পাশাপাশি কিছু অণু খাবার (জিপসাম, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি) দিয়ে থাকেন। 

 

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, বিজয়নগরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩৮ হেক্টর কুলচাষ হয়েছে। উপজেলায় পাহাড়পুর, হরষপুর, সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে বেশি কুলচাষ করা হয়।

 

পাশাপাশি চম্পকনগর, পত্তনে কিছু আবাদ হচ্ছে। বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, বিজয়নগরে মিশ্র ফলের চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি অধিক লাভজনক। তিনি মিশ্র ফলবাগান করতে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার কথা বলেন। সদ্য বিয়ে করা তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল করিম শুধু একাই লাভবান হচ্ছেন তেমনটি নয়। তার এই মিশ্র ফলের বাগানে কাজ করে খেয়েপরে সুখে আছেন আরো কিছু মানুষ। কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কয়েকজনের।

 

ভোরের আকাশ/নি