logo
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:৪৩
বিশেষজ্ঞদের মত উন্নত দেশ বিনির্মাণে আরেকটি মাইলফলক
মেট্রোরেলের সুফল পেতে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন
মো. রেজাউর রহিম

মেট্রোরেলের সুফল পেতে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন

মো. রেজাউর রহিম: অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে রাজধানীতে চালু হয়েছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় রাজধানীবাসীর যোগাযোগ অনেক সহজ হবে এবং যানযটও অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পদ্মা সেতু সফলভাবে নির্মাণ এবং উদ্বোধনের পর রাজধানীতে মেট্রোরেল চালু, দেশের উন্নয়নের আরেকটি মাইলফলক বলেও মনে করেন তারা।

 

এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে পদ্মা সেতুর মতো মেট্রোরেলও গুরুত্বপুর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। আর উন্নত দেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল অন্যতম মাইলফলক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মেট্রেরেলের সুফল পেতে সমন্বিত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

 

মেট্রোরেল চালু এবং এর সুফল প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় মেট্রোরেল এখন নতুন বাস্তবতা। মেট্রোরেল ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে বড় একটা ভ‚মিকা রাখতে পারবে তবে এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

 

ড. আদিল মুহাম্মদ খান আরো বলেন, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করবে। তবে পরিকল্পনাগত বাস্তবতায় পুর্ণাঙ্গ রুটে অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু না হলে মেট্রোরেলের পুরোপুরি সুফল মানুষ পাবে না। তিনি বলেন, প্রথম পর্বে অন্তত মেট্রোরেল সংযোগকে ফার্মগেট পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারলেও ঢাকার উত্তর অঞ্চল ও ঢাকার মধ্য তথা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মধ্যে রেল যোগাযোগ বহুল সংখ্যক মানুষের সরাসরি উপকারে আসত।

 

আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তবে আগামী বছর উত্তরা থেকে আগারগাঁও হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি ৬ লাইনের পুরোটা চালু হলে বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে দ্রæত পরিবহন করা যাবে, যা নগরের পরিবহন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

 

এছাড়া মেট্রোরেলের সফলতায় বহুমাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর আশপাশে পথচারী চলাচল, বাস-প্যারা টানজিট-কমিউনিটিভিত্তিক সার্ভিস, ব্যক্তিগত গাড়ি-সিএনজি-রিকশা প্রভৃতি বাহনগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কীভাবে মেট্রো স্টেশনে আসবে বা স্টেশন হতে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে সে ব্যাপারে কার্যকর পরিকল্পনা জরুরি।

 

আদিল মুহাম্মদ খান আরো বলেন, পাশাপাশি মেট্রোরেল ও মেট্রো স্টেশনের চারপাশ ঘিরে ভ‚মি ব্যবহার, আবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে ঢাকার টেকসই ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন এবং বাসযোগ্যতা বাড়ানোর বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। যোগাযোগ অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার যথাযথ সম্বয়ের মাধ্যমে মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ উপযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, মেট্রোরেলের মাধ্যমে যাত্রীরা দ্রুত ও সহজে যাতায়াত করতে পারবে। মেট্রোরেল এক সঙ্গে অনেক যাত্রীকে বহন করতে পারে। এছাড়া মেট্রোরেল যানজট কমানোর মাধ্যমে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করবে। মেট্রোরেলে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর কারণে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে দেবে, যা রাস্তার ওপর থেকে চাপ কমাতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালু হওয়ায় জ¦ালানির অপচয় কমবে।

 

আর যাতায়াত খরচ ও সময় কমে যাওয়ায় পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় ও কমবে বলে আশা করা যায়। মেট্রোরেলের আরেকটি সুবিধা হলো পরিবেশ দূষণ কমানো। পরিবেশ দূষণ কমলে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং চিকিৎসা ব্যয় কমবে।

 

তবে মেট্রোরেলের সুবিধা নির্ভর করবে সার্বিক সিস্টেমের ওপর উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্টেশন ও টিকেটিং ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মেট্রোরেলে কোচ ও যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা পদ্ধতি ও যাত্রী আগমন-নির্গমন ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। সাইফুন নেওয়াজ আরো বলেন, মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণ, পানি নিষ্কাশন ও পরিছন্নতা বজায় রাখতে হবে। উন্নত দেশ বিনির্মাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল যুগান্তকারী ভ‚মিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যমতে, বছরে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৫ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে যানজটের কারণে। টাকার অঙ্কে যা ৮৭ হাজার কোটি টাকা। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এমআরটি-৬ লাইন যানজটের ক্ষতি কমাবে ৯ শতাংশ।

 

বর্তমান সরকারের আমলে যে কটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, মেট্রোরেল তার অন্যতম। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্য অংশের যোগযোগ অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হয়েছে। আর মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হলে ঢাকা শহরের যানজট ও মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে আশা করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি