logo
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ২০:৪৮
ওশি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন
২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে নিহত ৯৬৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে নিহত ৯৬৭

দেশে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি কমছেই না। কর্মপরিবেশও হচ্ছে না শ্রমিকবান্ধব। এতে প্রতিদিনই সাধারণ শ্রমিকদের জীবনহানি হচ্ছে। অনেকে আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের তুলনায় এ বছর সারা দেশে কর্মক্ষেত্রে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশ ওশি (অক্যুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট) ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে কর্মস্থলে হতাহত হয়েছেন ১ হাজার ১৯৫ শ্রমিক। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৯৬৭ এবং আহত হয়েছেন ২২৮ জন। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে হতাহতের এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯ জন।

 

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার এ তথ্য তুলে ধরে ওশি ফাউন্ডেশন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সংস্থাটি জানায়, ২০২২ সালে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ২৪৬ শ্রমিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৯৪৯ শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে মারা গেছেন ১৫২ এবং আহত হয়েছেন ৯৪ জন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৮১৫ জনের মৃত্যু এবং আহত হয়েছেন ১৩৪ জন। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে মারা যাওয়া ৯৬৭ জনের মধ্যে নারী শ্রমিক ২৪ এবং পুরুষ শ্রমিক ৯৪৩ জন। আর এ দুই খাতে আহত ২২৮ জনের মধ্যে নারী শ্রমিক ছিলেন ২৮ এবং পুরুষ শ্রমিক ছিলেন ১৯০ জন।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক চায়না রহমান। ওশি ফাউন্ডেশনের পরিচালক (এডমিন) আলম হোসাইনের সঞ্চালনায় এতে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প সমন্বয়ক এমএম কবীর মামুন। ওশি ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২২ সালে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যে ৯৬৭ শ্রমিক নিহত হন, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক মারা যান পরিবহন খাতে। বছরজুড়ে এ খাতে মোট হতাহতের সংখ্যা ৪৭৬, যার মধ্যে ৪২৫ জন নিহত আর ৫১ জন আহত হয়েছেন; যা মোট হতাহতের ৪০ শতাংশ। হতাহতের দিক দিয়ে পরিবহন খাতের পরেই রয়েছে সেবামূলক খাত। এ খাতে মোট ২৭০ শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ২১১ জন মারা গেছেন আর ৫৯ জন আহত হয়েছেন; যা মোট হতাহতের ২৩ শতাংশ। এ সেবামূলক খাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হোটেল বা রেস্টুরেন্ট, সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী প্রভৃতি।

 

সেবা খাতের পর রয়েছে কৃষি খাত। এ খাতে মোট ১৩৯ জন শ্রমিক হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১২৪ জন মারা গেছেন আর ১৫ জন আহত হয়েছেন; যা মোট হতাহতের ১২ শতাংশ। ফসল উৎপাদন কর্মী, জেলে, চা-শ্রমিক, গরু ও মুরগির খামারের শ্রমিক এ খাতের আওতাভুক্ত। নির্মাণ খাতে বছরজুড়ে ১৩৪ শ্রমিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০৫ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন; যা মোট হতাহতের ১১ শতাংশ। আর ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে মোট হতাহতের সংখ্যা ১০০ জন, যার মধ্যে ৬৭ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হয়েছেন; যা মোট হতাহতের ১৮ শতাংশ। এ বছর তৈরি পোশাক শিল্প খাতে মোট ৫৪ শ্রমিক হতাহতের শিকার হন। এর মধ্যে ২৮ জন মারা যান এবং ২৬ জন আহত হন; যা মোট হতাহতের ৪ শতাংশ। বছরজুড়ে জাহাজভাঙা শিল্পে হতাহতের সংখ্যা ২২ জন, যার মধ্যে নিহত ৭ জন এবং আহত হন ১৫ জন; যা মোট হতাহতের ২ শতাংশ। ওশি ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা যায়, গত এক দশকে (২০১৩-২২) মোট ১৫ হাজার ২৫৯ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে হতাহতের শিকার হন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৫৮ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৭০১ জন আহত হন। তবে ২০২০ সালে করোনা অভিঘাতের সময় এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি ওসি ফাউন্ডেশন। ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের তথ্য গবেষণা প্রতিবেদনে সংযোজন করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা