logo
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:৩০
মানিকগঞ্জে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ এখন হলুদের গালিচা
বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ এখন হলুদের গালিচা

মানিকগঞ্জে সরিষা ফুলে ছেয়ে যাওয়া ফসলের মাঠে শিশুরা

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ এখন সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। যেন মাঠে মাঠে হলুদ গালিচা পাতা। সরিষা গাছের মাথায় হলুদ রঙের ফুল, হালকা বাতাসে দুলে গন্ধে মাতিয়ে দিচ্ছে পুরো এলাকা। সেই সঙ্গে সরিষার ফুল থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মেতেছেন। হলুদের রঙে মনকে মাতিয়ে নিতে প্রতিদিন বিকেলে নিজ জেলার মানুষসহ আশপাশের জেলার লোকজন আসছেন উপজেলার বিভিন্ন মাঠের সরিষা ক্ষেতে।

 

প্রতিটি উপজেলার মাঠগুলো হলুদ রঙে আর সুবাসে ছেয়েছে। প্রকৃতি সেজেছে এক অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক রূপে। এ বছর আবহাওয়া সরিষা আবাদের অনুক‚লে থাকায় কৃষকেরা ফলন ভালো পাওয়ার আশা করছেন। জেলায় গতবারের চেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বলছেন কৃষি কর্মকর্তা। কম খরচে বেশি উৎপাদন এবং লাভজনক হওয়ায় এখানকার কৃষকদের মধ্যে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। নভেম্বর মাসের শুরুতে কৃষকরা সরিষার বীজ বুনেন। জানুয়ারির শেষ দিকে ফসল ঘরে তোলেন।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় এক লাখ তিন হাজার হেক্টর। এর মধ্যে এবার ৪৭ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৩৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর সরিষা চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ হাজার ৬৯২ হেক্টর। এবার জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ১২৯ টন।

 

পশ্চিম দাশরাবাসী খালেদা আক্তার খান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে আমি ও আমার বন্ধুরা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চরমত্ত চকে সরিষা ফুলের মনমাতানো গন্ধের টানে আসি। দু’চোখ যত দূরে যায় হলুদ আর হলুদ দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়। এখানে এসে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে ছবি তুলি। সবাই মিলে সরিষা ক্ষেতের হাতাল দিয়ে হাঁটি এবং ফুলের ওপর দিয়ে আলতো করে হাত বুলাই। যতক্ষণ থাকি সেই সময়টা খুব ভালো লাগে।

 

তিনি আরো বলেন, ফেরার পথে এখানকার সরিষা ফুলের খাঁটি মধু কিনে নিয়ে যায় সবাই।

 

কৃষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, এ বছর ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। সে কারণে সরিষার কোনো ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া সরিষা আবাদের অনুক‚লে থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি।

 

কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, গত বছর জমিতে সরিষা রোপণের কিছুদিন পরে বৃষ্টি নামার কারণে সরিষা আবাদ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর কোনো সমস্যা হয়নি। সামনের দিনগুলো ভালো গেলে আশা করছি আমার ৩২ শতাংশ জমি থেকে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা পাব।

 

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লা বলেন, সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ বছর কৃষকদের পর্যাপ্ত সার ও বীজ দেয়া হয়েছে। সরিষার ফলন ভালো পেতে আমরা নিয়মিত কৃষক ভাইদের পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সঙ্গে সরিষা খেতের পাশে মধু চাষ করাচ্ছি। এতে যেমন সরিষার ফলন বাড়ছে তেমনি মধু উৎপাদন হচ্ছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষা পাবেন বলে আশা করছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

 

ভোরের আকাশ/নি