logo
আপডেট : ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:০০
পতনের পুঁজিবাজারে ছিল কিছু স্বস্তি
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

পতনের পুঁজিবাজারে ছিল কিছু স্বস্তি

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিদায়ী বছরে পতনের কবলে আবদ্ধ ছিল দেশের পুঁজিবাজার। বছরের বেশিরভাগ সময় ছিল লাগাতার পতন। সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্তে¡ও দীর্ঘমেয়াদিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাজার। কয়েকবার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত আবারো পতনে ফিরে গেছে। যার জেরে বছরজুড়েই লোকসানের হিসাব করতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

 

তবে এর মধ্যে ছিল কিছু সুখবর। নানা সংকটের মধ্যেও পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ইসলামী সুকুক বন্ড তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন শুরু হয়েছে। লেনদেনের অপেক্ষায় রয়েছে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)। একইভাবে কোম্পানিকে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজার উন্নয়নে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।

 

ফিরে তাকালে দেখা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে করোনা মহামারিতে বিধ্বস্ত বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার প্রত্যাশা করছিল, তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সেই গতি মন্থর করে দেয়। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয় বিশ্বের পুঁজিবাজারে, যার রেশ পড়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও। একইভাবে বিভিন্ন কারণে বাজারচিত্র পাল্টে যেতে থাকে। কমতে থাকে লেনদেন। টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ হতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তেমন ফল পাওয়া যায়নি।

 

এদিকে পুঁজিবাজারের চলমান দরপতনের সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্ব অর্থনীতির নানামুখী সংকটের প্রভাব। বিশ্ব জুড়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বিপাকে পড়ে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো। অর্থনীতিতে দেখা দেয় অস্থিরতা। বৈশ্বিক অর্থনীতির বৈরী পরিস্থিতির প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন আর্থিক সূচকেও নেতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বাজারে। পরে বছরের মাঝদিকে অর্থাৎ আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে পুঁজিবাজারে যে উত্থান দেখা দিয়েছিল, তবে তার স্থায়িত্ব বজায় না থাকায় শেষ দুই মাসের অস্থিরতা নিয়েই শেষ হয়েছে ২০২২ সাল।

 

অন্যদিকে পুরোনো বছরে যা হয়েছে, তা ভুলে গিয়ে নতুন বছর পুঁজিবাজার ভালো হবে এমন প্রত্যাশা সবার। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের আগে থেকেই পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবের ক্ষেত্রে শেয়ারের ক্রয়মূল্যেকে বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনার দাবি জানিয়ে আসছিল এক যুগের বেশি সময় ধরে এ দাবি অমীমাংসিত ছিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেন। এখন বাজারমূল্যে ধরা হচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ। এতে চলতি বছর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

 

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা নিয়ে লেনদেন শুরু করেন। তাদের প্রত্যাশা থাকে বাজার ভালো যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি এক কথা নয়। বিভিন্ন কারণে পুঁজিবাজারের চিত্র পরিবর্তন হয়। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের হিসাবও কষতে হয়। পুঁজিবাজারে লাভ লোকসান থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে বাজারে যেন অস্বাভাবিক কিছু না ঘটে তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে। সবার মতো আমিও আশা করি, নতুন বছরে পুঁজিবাজার ভালো যাবে।

 

জানা যায়, চলতি বছরে ডিএসইর বর্তমান বোর্ডের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো এক্সচেঞ্জের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক ডাটা সেন্টার তৈরির কাজ করছে; যার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সংযোজনের পর শিগগিরই ডাটা সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে।

 

ডিএসই জানিয়েছে, জাতীয় অর্থনীতির নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিএসইর সেবা ও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক বেশি। কোনো দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের পুঁজিবাজারের কার্যক্রমকে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে মোনায়েম বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে ২৪ রেকের একটি ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট স্থাপনের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

ডাটা সেন্টার এবং ডিআর প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিএসই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা আশা করেন, ২০২৩ সালের শুরুতেই এ সংকট কিছু হচ্ছে। তাছাড়া ২০২৩ সালের শুরুতেই মোবাইল অ্যাপসের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, বন্ড মার্কেটের জন্য স্বতন্ত্র অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠাসহ বাজারের অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং গুণগত সম্প্রসারণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে, যা পুঁজিবাজারে এর সুফল বয়ে আনবে বলে জানান তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি