logo
আপডেট : ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:১০
লয়েডস লিস্টে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা
পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর
রুবেল দাশ, চট্টগ্রাম

পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর

রুবেল দাশ, চট্টগ্রাম: ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতায় গত বছর পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর। ৪৫ বছর পর ২০২১ সালে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়ে চট্টগ্রাম বন্দর। ইতিহাস বদলানোর ফলাফল স্বরুপ কনটেইনার পরিবহনের বৈশ্বিক তালিকায় তিন ধাপ এগিয়েছিল অর্থনীতির স্বর্ণদ্বারখ্যাত এই বন্দর। গত বছরের শেষ চার মাসে কনটেইনার পরিবহনে হোঁচট খাওয়ায় ‘থ্রি মিলিওনিয়ার ক্লাব’ থেকেও ছিটকে পড়ে বন্দর। সর্বশেষ লয়েডস লিস্টেও বর্তমান অবস্থান ধরে রাখা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

 

১৯৭৭ সাল থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং শুরু হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। ২০২১ সালের মতো বিপুলসংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড নেই বন্দরের। ওই বছর ৩২ লাখ ১৪ হাজার একক কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক তালিকায় তিন ধাপ এগিয়ে ৬৪ তম অবস্থান দখলে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার একক কনটেইনার। ওই বছর ৫৮তম স্থান থেকে ৯ ধাপ পিছিয়ে ৬৭তম স্থানে চলে যায় চট্টগ্রাম বন্দর।

 

২০২২ সালে এসে মাত্র ৩১ লাখের সামান্য বেশি একক কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। ২০২২ সালের চিত্র বিবেচনা করলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তাই ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে লয়েডস লিস্ট প্রকাশিত হলে সেখানে বৈশ্বিক ক্রমতালিকায় পিছিয়ে পড়বে বন্দর।

 

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকট, এলসি খোলায় ব্যাংকের কড়াকড়ি ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

 

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ডলারের রিজার্ভের কমতি দেশীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সেই প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও।

 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ১৪ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। তবে গত বছরে ৩১ লাখের সামান্য বেশি পণ্য পরিবহন হয়েছে।

 

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা নামায় প্রভাব পড়েছে প্রাইভেট আইসিডিগুলোতেও। বেসরকারি ডিপোগুলোর মাধ্যমে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার অধিকাংশই পোশাক। বর্তমানে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ না থাকায় চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলোও সংকটময় সময় পার করছে। পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণেও ডিপোগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

 

গত বছর চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৯টি ডিপোতে ৩ লাখ ৩ হাজার আমদানি ও ৭ লাখ ৯০ হাজার রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। অপরদিকে গত বছর ২ লাখ ৩৭ হাজার আমদানি ও ৭ লাখ ৩৫ হাজার রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি ডিপোগুলোতে পণ্য পরিবহনে ধাক্কা লেগেছে।

 

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যবসা কমে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি-রপ্তানি কমায় বন্দরে পণ্য পরিবহনও কমে গেছে। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যাদেশ নেই।

 

বাংলাদেশ ইংল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান ভোরের আকাশকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ জাহাজিকরণ প্রক্রিয়া ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে সম্পন্ন হয়। পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে। ফলে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদনেও ভাটা পড়েছে।

 

চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৩ হাজার টিইইউএস কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ে ৪০ হাজারের বেশি কনটেইনার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে ২৭ হাজার ৮০০ টিইইউএস কনটেইনার রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি