logo
আপডেট : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৭:৪৪
ফখরুল-আব্বাসের আপাতত কারামুক্তি মিলছে না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফখরুল-আব্বাসের আপাতত কারামুক্তি মিলছে না

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর আগামী ৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। এই সময় পর্যন্ত তাদের জামিননামা দাখিল না করতে বিএনপি নেতাদের আইনজীবীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম গতকাল বুধবার এ আদেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ ওই দুই নেতার জামিননামা দাখিল করা হবে না-বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এই অঙ্গীকার করায় আদালত উল্লেখিত আদেশ দেন। ফলে আপাতত মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের কারামুক্তি মিলছে না।

 

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন।

 

আর বিএনপি নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ সময় অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন উপস্থিত ছিলেন।

 

রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গত ৭ ডিসেম্বর পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে ছয়মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এই জামিন স্থগিত চেয়ে গতকাল সকালেই আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার আদালতের কার্যতালিকার এক নম্বরে ছিল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন।

 

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, গত ২১ ডিসেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আগামী ২৬ জানুয়ারি শুনানির জন্য ধার্য্য আছে। ওই আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় হাইকোর্টে আবেদন করতে পারেন না। আর হাইকোর্টও আদেশ দিতে পারেন না। এ কারণেই হাইকোর্টের জামিন স্থগিত চাচ্ছি।

 

এ পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশের আংশিক বলেছেন। পুরোটা পড়েননি। মহানগর দায়রা আদালতে অন্তবর্তীকালীন জামিন আবেদন করা হয়েছিল। ওই আদালত সে আবেদন খারিজ করেন। এরপরই ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে আসি। এটা আইনসিদ্ধ। তাই হাইকোর্ট যথাযথ আদেশ দিয়েছেন।

 

এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটির ওপর আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে ৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করে আদেশ দেন। ওইদিন এই আবেদন তালিকার শীর্ষে থাকবে। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, স্থগিতাদেশ না দিলেতো কারাগার থেকে বেরিয়ে যাবে। এরপর আদালত বলেন, ওই পর্যন্ত স্থগিতাদেশ থাকবে।

 

এই স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করে বিএনপি নেতাদের আইনজীবীরা বলেন, আমাদের বক্তব্য পুরোপুরি না শুনে স্থগিতাদেশ দিতে পারেন না। বেশ কয়েক মিনিট ধরেই তারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা বলেন, আমরা অঙ্গীকার করছি, ওই সময় পর্যন্ত কোনো জামিননামা দাখিল করা হবে না। জামিননামা দাখিল না করলেতো তারা কারাগার থেকে বের হতে পারবেন না। এরপর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর আগামী ৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করে চ‚ড়ান্ত আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, এই সময় পর্যন্ত তাদের জামিননামা দাখিল করা যাবে না।

 

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতেও তাদের অন্তবর্তীকালীন জামিন আবেদন খারিজ হয়। তবে মূল আবেদনের ওপর ২৬ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়।

 

এরও আগে গত ৯, ১২ ডিসেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিএনপির ওই দুই কেন্দ্রীয় নেতার জামিন আবেদন খারিজ করা হয়।

 

১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বিএনপিকর্মী মকবুল হোসেন। সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত হন অর্ধশতাধিক। সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করে। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা সকলেই বিএনপির নেতাকর্মী।

 

ওই ঘটনায় সেদিনই নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহব্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

একই মামলায় ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সোয়া তিনটায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৯ ডিসেম্বর তাদের ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে তারা কারাবন্দি।

 

ভোরের আকাশ/নি