logo
আপডেট : ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:৩৬
এ মাসে বইতে পারে ২/৩টি শৈতপ্রবাহ
তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ
বিপদে খেটে খাওয়া মানুষ, বাড়ছে শীতজনিত রোগ
এম বদি-উজ-জামান

তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ

এম বদি-উজ-জামান: জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায় /আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল এই নিয়ে খেলা করে। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের এই কবিতার সঙ্গে বর্তমান শীতের কোনো মিল নেই। শীত এসেছে, নেই রোদের দেখা। ফলে সব সৌন্দর্য যেন বিলীন। হঠাৎ তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই গতকাল বুধবার তীব্র শীত জেঁকে বসেছে।

 

গতকাল রাজধানীসহ দেশের কোথাও সূর্যের আলো দেখা যায়নি বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উত্তরী হাওয়ার কারণেই এই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সূর্যের আলো দেখা না যাওয়ায় দিনের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকার পাশাপাশি উত্তরী হাওয়ায় রাজধানীসহ অনেক এলাকায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। আরো কয়েকদিন এমন আবহাওয়া থাকতে পারে। কার্যত দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণেই এই শীতের অনুভূতি।

 

দিনভর কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ, সঙ্গে উত্তরী হাওয়ার কারণে চলতি শীত মৌসুমের বিশেষ করে পৌষের শেষদিকে এসে রাজধানীবাসী কনকনে শীত টের পাচ্ছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে।

 

শীতের তীব্রতায় দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় বেড়েছে শীতের এই তীব্রতা। একই সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া, সঙ্গে কুয়াশার দাপট। এই শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন বিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ। কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতের কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এ ছাড়া রাজধানীতে হঠাৎ শীত চেপে বসায় শীতবস্ত্র কেনার ধুম পড়েছে। সড়কে ছুটেচলা যানবাহনগুলোকে হেডলাইটের সঙ্গে ফগলাইট জ্বালিয়ে খানিকটা ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে।

 

এমন অবস্থায় গতকাল সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেইসঙ্গে আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। আর জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে সারা দেশে ২/৩টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহও হতে পারে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রামে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বরিশালে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

 

আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান বলছেন, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভ‚তি হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। টানা কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা কমার প্রবণতার মধ্যে পৌষের মাঝামাঝিতে দেশের সর্বত্র শীত ও কুয়াশার দাপট বেড়েছে। তারা বলছেন, বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে।

 

ঢাকায় শীতের তীব্রতা বাড়ায় ফুটপাতে, বস্তিতে নিম্নবিত্তের মানুষ পড়েছেন বিপদে। গতকাল ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে মনে হচ্ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে কাগজ, খড়কুটো জ¦ালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়। রাজধানীর মিরপুর, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান আর বায়তুল মোকাররম এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গরম কাপড় কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। ফলে হকাররা শীতবস্ত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন অনেক ক্রেতাই।

 

জানা যায়, নীলফামারী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে আসন সংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরোগী বেশি। সেখানকার চিকিৎসক জানান, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। পাশাপাশি যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে, তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।

 

কুড়িগ্রামেও শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। শয্যা-সংকটে ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। প্রায় একই অবস্থা দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ হাসপাতালের।

 

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে যোগাযোগের নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। বিআইডবিøউটিসি সূত্রে জানা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে রাত ৩টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।

 

যাত্রী ও গাড়ির চাপ থাকায় ১৫টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে রাতেই ঘাটে আটকা পড়ে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক যানবাহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।

 

ভোরের আকাশ/নি