logo
আপডেট : ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:৪৭
দেড় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের ‘ডিজিটাল গেট ফি’
রুবেল দাশ, চট্টগ্রাম

দেড় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের ‘ডিজিটাল গেট ফি’

রুবেল দাশ, চট্টগ্রাম: ইংরেজ শাসনামলে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় দুটি অস্থায়ী জেটি নিয়ে পথ চলা শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর। ১৮৯৯ সাল থেকে পরবর্তী এগারো বছরের মধ্যে তৈরি হয় চারটি স্থায়ী জেটি। পাকিস্তান আমলে ‘চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট’ খ্যাত এ বন্দর রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। স্বাধীনতার পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষতে রূপ নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

 

শতবছর ধরে প্রথাগত পদ্ধতিতে সার্বিক কাজ করতো বন্দর কর্মকর্তা ও ব্যবহারকারীরা। পরে কালের বিবর্তনে একে একে সংযোজন হয় নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। আধুনিক বিশে^র সঙ্গে তাল মেলাতে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম, অনলাইন ডেলিভারি অর্ডারসহ (ডিও) নানামুখী ডিজিটাল উদ্যোগে সফল হলেও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ির ‘ডিজিটাল গেট ফি’ বাস্তবায়নে দেড় বছরেও আলোর মুখ দেখেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

বন্দরের আট প্রবেশমুখে এখনো ‘ডিজিটাল গেট ফি’ দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও চালকরা প্রথাগত নিয়মেই (ম্যানুয়াল পদ্ধতি) ফি পরিশোধ করছেন। নতুন নিয়মের সঙ্গে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের তাল মেলাতে ২০২১ সালে দেয়া হয়েছিল দুমাস সময়। দুমাস পেরিয়ে দেড় বছরেও ডিজিটাল নিয়মের সঙ্গে খাপ খেতে পারেনি গাড়ি চালকরা। অথচ ২০২১ সালের ১১ জুলাই থেকে অনলাইনে ফি পরিশোধের পাশাপাশি প্রথাগত নিয়মে অর্থাৎ নগদ অর্থ পরিশোধের মাধ্যমেও মালবাহী গাড়ি প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়।

 

ওই বছর আধুনিক এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে দুমাসের বেশি সুযোগ দেয়া হয়েছিল। পরে ২ আগস্ট বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে চিঠি ইস্যু করে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো গাড়ি অনলাইনে আবেদন ও ফি পরিশোধ না করে বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফটক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে বন্দরের নর্থ কনটেইনার ইয়ার্ডে প্রবেশে অনলাইনে আবেদন ও ফি পরিশোধের ব্যবস্থা চলমান আছে। অনলাইনে আবেদন করে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রেইলার বন্দরে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। এ জন্য বন্দরের আটটি ফটকে পাস কাউন্টারে সেবা ডেস্কও চালু রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

অথচ বর্তমানে প্রথাগত নিয়মেই ফি পরিশোধ করে গাড়িগুলো বন্দরের ভেতর প্রবেশ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা ও পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, বন্দরের গাড়ি প্রবেশ করার জন্য অনলাইনে ফি পরিশোধের সিস্টেমটি এখনো চালু আছে। তবে অধিকাংশ চালকরা প্রথাগত পদ্ধতিতে ফি জমা দিয়ে বন্দরের ভেতরে গাড়ি প্রবেশ করাচ্ছেন। এটার জন্য মূলত চালকদের উপযুক্ত শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন তারা।

 

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, বন্দরকে পুরোপুরি আধুনিকতার আওতায় আনতে অনলাইনে ফি পরিশোধের মাধ্যমে পণ্যবহনকারী গাড়ি প্রবেশের পদ্ধতি চালু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিঃসন্দেহে এটা ভালো উদ্যোগ। আমরা নিজেরাও এটা পূর্ণ সমর্থন করি। তবে সত্য বলতে আমাদের চালকরা অসচেতন হওয়ায় এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চালকদের এ পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ উমর ফারুক ভোরের আকাশকে বলেন, ২০২১ সালের জুলাই থেকে অনলাইনে ফি পরিশোধের মাধ্যমে বন্দর এলাকায় গাড়ি প্রবেশের নিয়ম চালু হয়। নতুন এ পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচুর সময়ও দেয়া হয়। চালকরা এখনো খাপ খেতে পারছে না। অথচ আমরা ‘ডিজিটাল গেট ফি’ প্রদানের সিস্টেমটি এখনো চালু রেখেছি।

 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের কম্পিউটারাইজড কন্টেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) উদ্বোধনের মাধ্যমে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম বন্দর। বর্তমানে সিটিএমএসকে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টিওএস) করা হয়েছে। টায়ার-২ সমমানের একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করার ফলে নিরবচ্ছিন্নভাবে অপারেশনাল অটোমেশন সেবা নিশ্চিত করছে বন্দর।

 

২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বয়ংক্রিয় ডেলিভারি পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দর বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড়ে অনলাইন ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপর সহজে এবং দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান প্রদান করতে চালু হয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার। অন্যান্য ডিজিটাল সেবায় সফল হলেও ‘ডিজিটাল গেট ফি‘ বাস্তবায়নে দেড় বছরও সফল হতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

এদিকে ৫০টি মডিউল তৈরির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে শতভাগ ডিজিটালাইজ করার কাজ চলছে। এরমধ্যে রয়েছে ডিজিটাল পেমেন্ট, অনলাইন বার্থিং সিস্টেম, পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (পিএমআইএস), ফিক্সড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল, অনলাইন ভেসেল বিলিং সিস্টেম, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম, অনলাইন শিপিং এজেন্ট বিলিং সিস্টেম অন্যতম।

 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়। পণ্য পরিবহন করতে চট্টগ্রাম বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও কনটেইনারবাহী প্রাইম মুভার চলাচল করে।

 

ভোরের আকাশ/নি