হাড় কাঁপানো শীতে কাপছে চুয়াডাঙ্গা। প্রচন্ড শীতে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে। রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এর আগে শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। মৃদু শৈত্য প্রবাহে বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

ভোর থেকে বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। বিপাকে পড়ছেন খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা। খড়কুটো জ্বালিয়ে কোনোরকম শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছে এসব মানুষ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

তীব্র ঠান্ডায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালে বাড়ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। শীতে নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ধানের বীজতলা।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এটি চলতি মৌসুমে এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ নিয়ে চলতি মাসে তিন দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো চুয়াডাঙ্গায়। শনিবারও এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত ডিসেম্বর মাসে চারদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করেছে চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ বেশি। এ মৌসুমে তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ও পরে তীব্র শৈত্য প্রবাহে রূপ নিতে পারে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা এলাকার ইজিবাইক চালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাতাসের কারণে ইজিবাইক চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যাত্রী খুবই কম। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে লোকজনের দেখা মিলছেনা। সূর্যও উঠছেনা যে রোদ তাপাবো।

চুয়াডাঙ্গা চৌরাস্তা মোড়ে শহীদ হাসান চত্বরে কাজের সন্ধানে অপেক্ষায় থাকা দিনমজুররা বলেন, কনকনে শীতের সাথে বাতাসে শীতের তিব্রতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারপরও থেমে নেই কাজ। বাধ্য হয়েই কাজের সন্ধানে বের হয়েছি।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দেউলী গ্রামের কৃষক রবিউল হোসেন বলেন, ভোরে কৃষি কাজের জন্য মাঠে এসেছি। ঠান্ডায় হাত চলছেনা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, তীব্র শীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগই শিশু রোগী। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ শতাধিক বয়োবৃদ্ধরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৪শ’ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার থেকে পাওয়া ২১ হাজার কম্বল শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষ থেকে আরো ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই ওগুলো পাওয়া গেলে বিতরণ করা হবে। তাছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেও সাড়া মিলবে আশা করি।

ভোরের আকাশ/আসা