কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিএনপির ঢাকার শান্তিপূর্ণ গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচী থেকে ১০ দফা দাবি আদায় ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী সমাবেশ এবং মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে আয়োজিত গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন,আগামী দিনের জন্যে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে তার মেরামত করতে হবে। যেজন্য বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতে ২৭ টি রূপরেখা ঘোষণা করেছে। বাসযোগ্য নিরাপদ রাষ্ট্র গড়তে হলে বর্তমান সরকারকে হটিয়ে একটি গণপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন- গণঅবস্থান মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমরা আজ একটা যুগের সন্ধিক্ষণে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। যখন এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি তখন কেরানীগঞ্জে ৬০০ কর্মী অবর্ণনীয় দুর্দশায় কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। তারা তাকিয়ে আছেন আপনাদের গণআন্দোলনের দিকে। আপনারা তাদের মুক্ত করবেন।
তিনি বলেন, এই সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দেউলিয়া দলে পরিণতি হয়েছে। তাই তো পুলিশ, আমলাদের ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে। তারা নির্যাতন-নিপীড়ন ছাড়া কোনোভাবেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পথ পাচ্ছে না। তাই তো এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের থেকে জনগণ মুক্তি চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন- বর্তমান সরকারের লক্ষ্য একটাই, অন্যায়ভাবে একদলীয় শাষণ প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া। আমরা তা করতে দিতে পারি না। তাই এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সরকার হটানোর আন্দোলন শুরু হয়েছে, সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট নাগরিকরাও এগিয়ে এসেছেন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ১০ দফা নিয়ে সবাই রাজপথে নেমে গেছে। তবে এজন্য আরো শক্তিশালী হয়ে জেগে উঠতে হবে।
গণঅবস্থান কর্মসূচির সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি যখনই কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়, সরকার ভীত হয়ে বলে আমরা সহিংসতা করার জন্য কর্মসূচি দেই। কিন্তু নেতাকর্মীরা প্রতিবারই প্রমাণ করে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন, আমরা ১০ দফা দিয়েছি, যে দফার ভিত্তিতে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ শুরু করবো, যা এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
এই বিএনপি নেতা বলেন, আমরা জানি সরকার ক্ষমতায় থাকলে এই ১০ দফা মানবে না। তাই আমরা সরকারের পতন ঘটানোর শপথ নিয়েছি, পরিকল্পনা মাফিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে আন্দোলনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এ সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহŸান জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা যখন জেল থেকে বের হই, তখন ৪৯১ জন নেতাকর্মী জেলখানায় বন্দি ছিলেন। সবার মুক্তি দাবি করছি। একজন জেলারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ৭-৮ জন কেন একটা রুমে রেখেছেন।
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, জেলখানায় জায়গা নেই। এই যে সারাদেশকে একটি বড় জেলখানায় বন্দি করা হয়েছে। এখানে যারা বসে আছেন, তারাই একদিন আওয়ামী লীগের পতন ঘটাবে। বিএনপির কোনো নেতাকে ছোট করে দেখার কিছু নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা কাউকে ধাক্কা দিয়ে, টোকা দিয়ে নয়, একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে চাই। ১০ দফা দাবি মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহব্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির এই গণঅবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে নয়াপল্টন ও তার আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে জনমনে নানা উদ্বেগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি