জাহাঙ্গীর আলম, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ত্রিশালে ফসলি জমি ও বসতিপূর্ণ এলাকাসহ যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ৫৮টি ইটভাটা। ৫৮টি ইটভাটার মধ্যে ৪২টি অবৈধ ভাটা। বৈধ ভাটা রয়েছে মাত্র ১৬টি। এসব ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের সকল নিয়ম উপেক্ষা করে গাছপালা উজাড় করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। নেই ছাড়পত্র বা কোনোপ্রকার অনুমতি। এতে বাড়ছে পরিবেশের দূষণ, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমির।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলায় রয়েছে ৫৮টি ইটভাটা। তারমধ্যে ৪২টি ভাটা, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনকে তোয়াক্কা না করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অধিকাংশ ইটভাটাই গড়ে উঠেছে তিন ফসলি জমিতে। আবার নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব অবৈধ ভাটাগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈধ ১৬ ভাটাতেও অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বৈইলর ইউনিয়নের ঝলক ইটভাটা মেসার্স হিটলার ব্রিকস কাঁঠাল ইউনিয়নের সায়মা ইটভাটা হরিরামপুর ইউনিয়নের নবাব ইটভাটা রোজ ব্রিকস কানিহারী ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামে মেসার্স একতা ব্রিকস, রামপুর ইউনিয়নের কাজিরকান্দায় টিবিসি ব্রিকসসহ অন্য ভাটায়ও অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বৈধ তালিকাভুক্ত হিটলার ব্রিকসের মতো অনেক ইটভাটাই স্থাপন হয়েছে তিন ফসলি জমিতে। নিষেধাজ্ঞা সত্বেও কেন কাঠ পুড়াচ্ছেন জানতে চাইলে মেসার্স একতা ব্রিকস ইটভাটার মালিক আলমগীর হোসেন জানান, ভাটায় আগুন দেয়ার প্রথমদিন লাকড়ি লাগে। তাছাড়া কয়লার দাম বেড়ে গেছে, এইসব স্ত‚পের সব কাঠ ভাটার জন্য ব্যবহার করা হবেনা। শ্রমিকদের রান্না-বান্নার জন্য আনা হয়েছে।
ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, কৃষি জমি, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ অন্য কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হইতে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বা স্থানে ইটভাটা স্থাপন করতে পারবেন না বলে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। নিষিদ্ধ ওইসব এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন আইনের অধীনে কোনোরূপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে না।
যদি কোনো ব্যক্তি ছাড়পত্র ছাড়া অথবা আইনের ধারা লঙ্ঘন করে ইট প্রস্তুত বা ইটভাটা স্থাপন, পরিচালনা বা চালু রাখেন তাহলে তিনি অনধিক দুই বৎসরের কারাদন্ড বা বিশ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। যদি কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি এক বৎসরের কারাদন্ড বা এক লাক টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর না থাকায় বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ভাটা।
বসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগ-বালাই। ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ ও উৎপাদন। এতে দেশে খাদ্য ঘাটতির আঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা।
জাতীয় কবি নজরুল বিশ্ব বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের ফলে মাটির ওপরের স্তরের জৈব পদার্থ নষ্ট হয়ে যায়। এতে দ্রুত নয়, আস্তে আস্তে উর্বরতা হারায় মাটি। ভাটা বন্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘদিন থাকে এর প্রভাব। অন্তত ১০/১২ বছর জৈব সার ব্যবহারের পর পূর্বের অবস্থানে ফিরে। যেহেতু উন্নত স্থাপনা নির্মাণে ইট আমাদের লাগবেই, তাই পরিবেশ সম্মত ইটভাটার বিপল্প নেই।
ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক উপসচিব দিলরুবা আহমেদ বলেন, নীতিমালা অনুসরণ করে যারা ভাটা স্থাপন করেননি আমরা তাদের লাইসেন্স দেয়নি। তবে যেসকল অবৈধ ভাটা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে বসতিপূর্ন এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বা ফসলি জমিতে থাকা ভাটা আমরা ভেঙে দিচ্ছি।
ভোরের আকাশ/নি